* हिन्दी | English | বাংলা | ಕನ್ನಡ | മലയാളം *
উত্তরাখণ্ডে ‘ঢাই আখর প্রেম’ জাতীয় সাংস্কৃতিক পদযাত্রা প্রথম দিনে 31 অক্টোবর 2023 তারিখে তেহরি গাড়ওয়ালের মুনি কি রেতিতে অবস্থিত শহীদ ভগত সিং স্মৃতিসৌধ থেকে শুরু হয়েছিল। রাজ্য আন্দোলনকারী কমলা পন্ত ভগৎ সিংয়ের মূর্তিতে মালা দিয়ে ‘ঢাই আখর প্রেম’-এর উত্তরাখণ্ড যাত্রার উদ্বোধন করেন। শহিদ ভগত সিং স্মৃতিসৌধ থেকে শুরু হয়ে লোকগান গাইতে গাইতে মিছিলটি শেশম ঝাড়ীতে পৌঁছায় । এখানের জনতা জত্থাকে স্বাগত জানায়। উত্তরাখণ্ড ইনসানিয়াত মঞ্চের কমলা পন্ত উত্তরাখণ্ড রাজ্যে এই চার দিনের সফর শুরু করার ঘোষণা করেন ।
‘ঢাই আখর প্রেম’ সাংস্কৃতিক সফরে যোগ দিতে সকলকে উদ্বুদ্ধ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ক্রমাগত ভ্রাতৃত্ববোধে আঘাত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাংবৈধানিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সমাজকে ধর্ম-বর্ণে বিভক্ত করার অপচেষ্টা চলছে। তাই সমাজকে বিভক্তকারী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো জরুরি। এটি একটি লোকগান দিয়ে শুরু হয় এবং দলে উপস্থিত স্থানীয় ভ্রমণকারীরা প্রেম ও সৌহার্দের স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে চলে ৷
উত্তরাখণ্ড রাজ্য আইপিটিএর সভাপতি ডক্টর ভি কে ডোভাল ‘ঢাই আখর প্রেম’ সাংস্কৃতিক সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সবাইকে জানালেন। তার কথা শুনে লোকেরা আশ্বস্ত করে যে তারা বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকবে এবং অন্য লোকেদেরও বোঝাবে কোন রকম বৈষম্য ছাড়াই একসাথে থাকতে তা সে ওরা যে কোন ধর্ম বা বর্ণেরই হোক না কেন,! এরপর ধর্মানন্দ লখেড়া, বিডি পান্ডে, বিক্রম পুন্ডির, হরিওম পালি ও কুলদীপ মাধওয়াল সমুহ গণ সঙ্গীত গাইলেন । ডাঃ ভি কে ডোভাল কমলা পন্তকে শ্রমের প্রতীক গামছা উপহার দেন। এই ভাবে যাত্রা অগ্রসর হতে থাকে ও শীসম ঝাড়ির চৌমাথায় পৌঁছায়, যেখানে ইপটা সহারনপুরের রঙ্গকর্মীরা, “যোগীরা সা রা রা রা” আর জনসংবাদের সতীশ ধৌলাখণ্ডি গণ সঙ্গীত পরিবেশন করলেন ৷ উপস্থিত সকলে একসঙ্গে গাইলেন,
মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বারে মে বাঁট দিয়া ভগবান কো,
ধরতী বাঁটি,সাগর বাঁটা,মত বাঁটো ইনসান কো।
এই যাত্রা প্রায় চার কিলোমিটার চলার পর “চন্দ্রেশ্বর নগর” নামে একটি মলিন বস্তিতে গরিব শিশুদের একটি স্কুলে “চন্দ্রেশ্বর পাবলিক স্কুলে”এসে পৌছাল।আমাদের দেখে স্কুলের স্টাফ ও শিশুগুলির চোখ মুখ খুশিতে ঝলমল করছিলো ।ওরা খুব উৎসাহিত হলো ৷ওই শিশুদের আরও উৎসাহিত করার জন্য সতীশ ধৌলাখণ্ডি ও ত্রিলোচন ভট্ট গণ সঙ্গীত গাইতে শুরু করলেন। ওদের সঙ্গে শিশুরা ও গলা মেলানোয় গানটি আরো উৎসাহবর্ধক হয়ে উঠলো:
তুম মুঝকো বিশ্বাস দো,ম্যায় তুমকো বিশ্বাস দুঙ্গা,
শঙ্কাও কে সাগর হাম তর যায়েঙ্গে,
ইস ধরতী কো মিলকর স্বর্গ বানায়েঙ্গে।
এরপর শিশুদের সামনে একটি পথনাটিকা ‘গিরগীট’ পরিবেশিত হয়। সাহিবা, কাইফ আনসারি, ছায়া সিং, নিতিন, শচীন, অতুল গয়াল এবং আসাদ আলি খান দুর্দান্ত অভিনয় করেন। এই ছোট নাটকটির মূল বিষয় পরিস্থিতি অনুযায়ী একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বদলে যাওয়া স্বরূপ। শিশুরা খুব আনন্দের সাথে নাটকটি দেখেছিল। তাদের হাসি পুরো নাটকটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। নাটক শেষ হওয়ার পর, শিশুরা পুরো দলের সাথে ছবি তোলে। স্কুলের ম্যানেজার প্রমোদ জিকে কবীরের শ্রমের প্রতীক একটি তাঁত গামছা উপহার দিয়ে হারিওম পালি সম্মানিত করেন।
পদযাত্রা শুরু হয় এবং ত্রিবেণী ঘাটে অবস্থিত স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শিকাগো যাওয়ার আগে স্বামী বিবেকানন্দ ঋষিকেশে থাকার সময় এই মন্দিরে ছয় মাস কাটিয়েছিলেন। এর পর মিছিলটি এগিয়ে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধ ‘গান্ধী স্তম্ভে’ পৌঁছায়। মহাত্মা গান্ধীর মৃতুর পর এখানেও তাঁর অস্থি বিসর্জন করা হয়। তার স্মরণে গান্ধী স্তম্ভ নির্মিত হয়েছিল। নন্দন পান্ডে, জগনন্দন শর্মা, আসাদ আহমেদ, বিক্রম পুন্ডির, হরিনারায়ণ, বিডি পান্ডে, হরিওম পালি প্রমুখ গান্ধীজীর প্রিয় স্তব ‘বৈষ্ণব জান তো তেনে কাহিয়ে রে, পীর পরাই জানে রে’ গাইলেন। এরপর আইপিটিএ সাহারানপুরের বন্ধুরা একটি লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক দলটি খাবার ও বিশ্রামের জন্য এখানে কিছুক্ষণ থামে।
বিকেল নাগাদ পদযাত্রা লোকগান গাইতে গাইতে, স্লোগান দিতে দিতে এবং লিফলেট বিতরণ করতে করতে শ্যামপুরে পৌঁছে যায়, যেখানে একটি ছোট গ্রামে, খাদরিতে একটি পথনাটিকা পরিবেশিত হয়। দৃষ্টি সংস্থার কুলদীপ মাধওয়াল জনকবি বল্লী সিং চিমার একটি গান পরিবেশন করেন।
গ্রামের নিবাসী রায় সিং কবিরের ‘ঝিনি ঝিনি বিনি চাদরিয়া’ গানটি পরিবেশন করেন এবং যাত্রার বার্তা সম্পর্কে শুভেচ্ছা জানান। নব্বই বছরেরও বেশি বয়সী গ্রামের প্রবীণ কুন্দন সিং হারমোনিয়ামে রাগিনী প্রস্তুত করেন। হরিওম পালি, নয় রাই সিং এবং কুন্দন সিংকে তাঁতে বোনা গামছা দিয়ে সম্মানিত করা হয়। পরের দিনের জন্য উদ্দীপনায় ভরপুর কিন্তু পথনাটকের মধ্য দিয়ে ক্লান্তিকর পদক্ষেপে আজকের পদযাত্রা রাতের খাবার ও বিশ্রামের মধ্য দিয়ে শেষ হলো৷
এই যাত্রায় রাজ্যের আন্দোলনকারী শ্রীমতি কমলা পান্ত, আইপিটিএ উত্তরাখণ্ড রাজ্যের সভাপতি ডক্টর ভি কে ডোভাল, সহ-সভাপতি হরিওম পালি, সহ-সভাপতি ধর্মানন্দ লাখেড়া, বিডি পান্ডে, দেরাদুন আইপিটিএ সভাপতি জগনন্দন শর্মা, সাধারণ সম্পাদক বিক্রম সিং পুন্দির, আইপিটিএ-র রাজ্য কার্যনির্বাহী সদস্য আসাদ আহমেদ, কুলদীপ মাধওয়াল, সাহিবা, কাইফ আনসারি, আসাদ আলি খান, নীতিন, ছায়া সিং, অতুল গয়াল, শচীন, জন সম্বন্ধের সতীশ ধোলাখণ্ডি, নন্দন পান্ডে, ত্রিলোচন ভট্ট, হরি নারায়ণ, প্রমোদ শর্মা, শিবকুমার ভরদ্বাজ,জগদীশ কুলিয়াল, প্রেমশঙ্কর, রাজভর, রাই সিং খাদরি, কুন্দন সিং শামিল ছিলেন।
01 নভেম্বর 2023, বুধবার
উত্তরাখণ্ড রাজ্যের পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে মৃদু রোদের সঙ্গে হালকা ঠান্ডায় সকাল ৮টায় ইন্দ্র গার্ডেন ওয়েডিং পয়েন্ট থেকে ‘ঢাই আখর প্রেম’ যাত্রা শুরু হয়। সকালের জলখাবার গরম পরাঠা আর আলুর তরকারি খেয়ে যাত্রা শুরু হলো। শ্যামপুর খাদরিতে সকাল সাড়ে আটটায় , স্থানীয় বন্ধু শ্রী রাম সিংকে গামছা দিয়ে সম্মানিত করা হলো । তাদের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার পরে, প্রত্যেকের মনে হল আরও এক কাপ চায়ে চুমুক দেওয়া যাক।
শ্যামপুর খাদরি থেকে যাত্রা শুরু হয়ে পৌঁছালো স্থানীয় নালন্দা স্কুলে। সেখানে স্কুলের শিশুরা আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে যাত্রার জন্য অপেক্ষা করছিল। অধ্যক্ষ শ্রী বিক্রম সিং নেগি এবং ম্যানেজার মহাবীর উপাধ্যায় যাত্রাকে স্বাগত জানান। স্কুলের ছাত্রী রুচি জোশী তার মিষ্টি কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো’ পরিবেশন করেন। সরদার রাম সিং জি সামাজিক সম্প্রীতি এবং শ্রী গুরু নানক দেবজীর কথা জানালেন। শ্রী ইশম সিং সায়নী জি কবীরের কবিতা আবৃত্তি করেন এবং কুমারী যোগিতা ভট্ট একটি কবিতা পাঠ করেন। নাটকটির উপস্থাপনা ছিল বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। নাটকে নীতিনের পাশাপাশি আসাদের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন সবাই। এরপর লোকগান গাইতে-গাইতে স্কুল থেকে বের হয় দলটি। লোকগানের আওয়াজ শুনে মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিল, কিছু মানুষ কৌতূহল নিয়ে দেখছিল আর কিছু প্রশ্ন তাদের চোখে-মুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল যে এই মানুষগুলো কে? কিছু দূর থেকে কিছু লোকও একসঙ্গে যাত্রায় যোগ দিচ্ছিল। ললিত বিহার থেকে ঠাকুরপুর খয়েরি খুর্দ পর্যন্ত যাত্রা এগিয়ে গেল। হর্ষপতি সেমওয়াল, গৌতম সিং নেগি, লাখী রাম রাতুরি, প্রীতি পাল রাউতেলা, বিক্রম সিং রাওয়াত, বালুনি প্রমুখ বন্ধুদের সাথে দেখা করলেন।
ঠাকুরপুর খয়েরি খুর্দ থেকে রাইওয়ালা নেপালি ফার্মের দিকে যাত্রা শুরু হয়। পথে প্রচুর গাছ-গাছালি আর উঁচু পাহাড় ছিল। বনের মাঝখানে একটি হ্রদ দেখা গেল, যেখানে মাছগুলি সাঁতার কাটছিল, এই হ্রদের জল ঠিক মুক্তোর মতো জ্বল- জ্বল করছিল। প্রকৃতির এই ছবি দেখে শরীর ও মনে বেশ প্রশান্তি অনুভব করছিল। সারাদিনের ক্লান্তি মুহুর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেল। প্রত্যেকে তাদের মোবাইল ক্যামেরায় সেই দৃশ্যটি ধরে রাখার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু কেউ কি প্রকৃতির অনন্য মাস্টারপিসটি সম্পূর্ণ ভাবে বন্দী করতে সক্ষম হয়েছে? দলের সবাই সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন।
যাত্রা চলতে থাকে। এর মধ্যে,ডক্টর ভি কে ডোভাল, ধর্মানন্দ লখেদা, হরিওম পালি এবং অশোক চৌধুরী, কুলদীপ মাধওয়াল, ওমপ্রকাশ নূর এবং আসাদ খানের মোবাইল ফোন বাজতে থাকে এলআইইউ-এর লোকেদের নানা প্রশ্ন – তারা কোথায় আছে, কোন জায়গায় যাবে, রাতে কোথায় থাকবে ? ইত্যাদি- ইত্যাদি ৷ ধর্মানন্দ লাখেড়ার নেতৃত্বে দলটি রাইওয়ালায় অবস্থিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতীত নগর অফিসে পৌঁছায়। হরিওম পালি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অনিল কুমার এবং শ্রী চিত্রবীর ছেত্রী জিকে একটি খাদির গামছা উপহার দেন। এরপর দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয়।
জত্থাটি হরিদ্বার হয়ে গুরুকুল কাংরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছায়। যেখানে আমরা মুদ্রিকা যাদব, জগদীশ কুদিয়াল, বিক্রম সিং নেগি, ভি কে সিং, সুনিরকা যাদবের সাথে দেখা করলাম। সবাই সেখানে গণ সঙ্গীত পরিবেশন করলেন । প্রচণ্ড ক্লান্তি থাকলেও সবার উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি। জনগণের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। দলের গণ সঙ্গীতে উৎসাহিত হয়ে সেখানকার লোকজন আমাদের সঙ্গে যাত্রা শুরু করে জামালপুর কালার দিকে।
এরপর লোকগান ও ধপলির সুরে মিছিলটি জামালপুর অভিমুখে চলে। পথিমধ্যে যানবাহনে যাতায়াতকারী লোকজন আমাদের প্রেমের কথা বলতে দেখে, তাঁরাও তাদের গাড়ি থেকে নেমে জত্থার সঙ্গে পা মিলিয়ে কয়েক কদম হাঁটতে থাকলেন৷ এইভাবে তাঁরা মিছিলকারী সঙ্গীদের উৎসাহিত করলেন। জত্থা পদযাত্রা করে জামালপুর কালা পৌঁছাল। এখানে সাহারানপুরের অন্যান্য বন্ধু সতনাম সিং, মানতাশা, আফশা, রামকৃষ্ণ ভারতী, অশোক কুমার, প্রবীণ কুমার, মনোজ কুমার, গ্রামের প্রধান মিঃ হরেন্দ্র, প্রাক্তন প্রধান সুশীল রাজ রানা, মিঃ কল্যাণ, জামালপুরের পন্ডিত অরুণ কুমারের সাথে দেখা হয়েছিল।
মিছিলটি জামালপুর কালা ঝান্ডা চকে এসে পৌঁছায়। সেখানে আইপিটি এর রাজ্য সভাপতি ডঃ ভি কে ডোভাল গ্রামের প্রধান হরেন্দ্র, অশোক চৌধুরী, পারভীন কুমার, কল্যাণ এবং অরুণ কুমারকে গামছা দিয়ে সম্মানিত করেন। জনগণের গান এবং আন্তন চেখভের লেখা ‘গিরগিট’ নাটকটি সাহারানপুরের বন্ধুরা সতনাম সিংয়ের পরিচালনায় উপস্থাপন করেছিলেন। এলআইইউ-এর কিছু লোক আমাদের সাথে হাঁটতে থাকল, প্রয়োজনীয় তথ্য নিচ্ছিল এবং অনুষ্ঠান দেখছিল। জনগণকে একসাথে থাকার বার্তা দিয়ে যাত্রার সমাপ্তি হয়।
02 নভেম্বর 2023, বৃহস্পতিবার
02 নভেম্বর 2023 সকালে, উত্তরাখণ্ড রাজ্যে ‘ঢাই আখর প্রেম’ সাংস্কৃতিক পদযাত্রার তৃতীয় দিনে, জামালপুরে বন্ধু অশোক চৌধুরীর বাড়িতে প্রাতঃরাশ করার পরে, দলটি রাস্তায় লোকগান গাইতে গাইতে জ্বালাপুরের দিকে চলে যায়।জ্বালাপুর হরিদ্বার জেলার সংলগ্ন একটি ছোট শহরতলি। BHEL এর নিকটবর্তী হওয়ার কারণে রানীপুর একটি ভাল ব্যবসা কেন্দ্র। নিকটবর্তী শহরের প্রধান বাজারও জ্বালাপুর।দলটি এখানে বাজারের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে, গণ সঙ্গীত গাইতে থাকে এবং ‘ঢাই আখর প্রেম’ এবং ‘পেয়ার মহব্বত ভাইচারা জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে থাকে।
জ্বালাপুর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দলটি বহদারাবাদে পৌঁছায়। বন্ধু বিজয় পালের নেতৃত্বে ওখানকার প্রধান যে মোড় সেখানে থেমে কিছু গান গাওয়া হয় এবং আশেপাশে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে ফোল্ডার বিতরণ করা হয়। গত তিনদিনের পদযাত্রার ক্লান্তি এখন দলের সাথীদের অভিব্যক্তি থেকে স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায়, কিন্তু উৎসাহ প্রথম দিনের মতোই ছিল। আজ সবাই তাদের উৎসাহকে আরও জীইয়ে রাখতে চাইছিল কারণ জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি রাকেশ বেদা আর কিছুক্ষণ পরে দলে যোগ দিতে চলেছেন। সঙ্গী হারিওম পালি, ডক্টর ভি কে ডোভাল, সতনাম সিং, ধর্মানন্দ লাখেদা, আসাদ আহমেদ, বিজয় পাল সিং, জগদীশ কুদিয়াল, অতুল গয়াল, শচীন, আসাদ আলি খান, নীতিন, মানতাশা, আফশা, রামকিশান ভারতী, কুলদীপ মাধওয়াল এবং জামালপুর থেকে যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন নাসির আহমেদ কালিয়ার শরীফের কাছে ধনোরি গ্রামে পৌঁছান।
আইপিটিএ জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি রাকেশ বেদা, যিনি লখনউ থেকে এসেছিলেন, ধনোরিতে দলে যোগ দিয়েছিলেন। সবাই তাকে সাদরে স্বাগত জানায়। ধানোরিতে অবস্থিত ন্যাশনাল ইন্টার কলেজের বাইরে জত্থার সদস্যরা গণ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ইন্টার কলেজের ছেলেমেয়েরাও গানে কণ্ঠ মেলান । সেখানে জড়ো হওয়া ভিড়কে ‘ঢাই আখর প্রেম’ যাত্রার বিষয়ে জানান রাকেশ বেদা । তিনি বলেছিলেন যে আইপিটি এতে যাত্রার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। আইপিটিএ-এর নামকরন করেন দেশের মহান বিজ্ঞানী ডঃ হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা। দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেশি ছিল না। কোনো বড় পরিবর্তনের জন্য বড় সংখ্যাগোষ্ঠীর অথবা শক্তির প্রয়োজন হয় না। এর জন্য প্রয়োজন আবেগ, নিষ্ঠা ও সততা। সর্দার ভগৎ সিং-এর সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামে খুব বেশি লোক ছিল না। নানক, কবির, স্বামী বিবেকানন্দ, বীর চন্দ্র সিং গাড়োয়ালির ইতিহাস বলে যে তারা সবাই একা ছিলেন।
ধানোরি থেকে মিছিলটি পিরান কালিয়ার শরীফের দিকে এগিয়ে যায়। দরগায় পৌছে সকলে দুপুরের লঙ্গরে অংশগ্রহন করে মধ্যাহ্নভোজ করেন, যার ব্যবস্থা করেন দরগাহের লঙ্গর ইনচার্জ জনাব সেলিম সাহেব। এখানেই বন্ধু ওম প্রকাশ নাদিম, দীপক এবং ওম প্রকাশ নূর, যারা লখনউ থেকে লিটল আইপিটিএ নিয়ে এসেছিলেন, তারাও দলে যোগ দিলেন । নতুন বসতি পিরান কালিয়ার শরীফে পৌঁছানোর পরে, গণ সঙ্গীত গাওয়া হয় এবং আইপিটিএ সাহারানপুর দ্বারা পথ নাটক ‘গিরগীট’ উপস্থাপন করা হয়। রাকেশ বেদ সমাজকর্মী জনাব মোস্তফা ত্যাগীকে গামছা উপহার দিয়ে সম্মানিত করেন। আইপিটিএ সাহারানপুরের সহকর্মী মানতাশা মিসেস আকবরীকে গামছা উপহার দিয়ে সম্মান জানান।
রাকেশ বেদা এই যাত্রা সম্পর্কে উপস্থিত সবাইকে অবহিত করলেন এবং বলেন যে এখানে সর্বত্র সাবির লেখা আছে, তবে আমাদের জানা উচিত সাবির কে ছিলেন? জনগণের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা সবাই আপনাদের সবার সঙ্গে দেখা করতে, দূরত্ব কমাতে বেরিয়েছি, আমরা ঐক্য ও সাম্যের বার্তা দিতে চাই, সাম্য ও ন্যায়ের বার্তা দিতে চাই৷ আসুন আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলি একটি নতুন সুন্দর পৃথিবী। রাতের জন্য বিশ্রামের আগে, রাকেশ বেদা যাত্রায় অংশগ্রহণকারী সমস্ত সঙ্গীদের সাথে বিশেষ করে যুবকদের সাথে অভিনয়ের জটিলতা এবং সংগঠন নিয়ে আলোচনা করেন।
03 নভেম্বর 2023, শুক্রবার
‘ঢাই আখর প্রেম’ 03 নভেম্বর 2023 তারিখে, উত্তরাখণ্ড ন্যাশনাল কালচারাল গ্রুপের চতুর্থ এবং শেষ দিনে, গ্রুপটি সকাল 8:30 টায় পিরান কালিয়ার থেকে রওনা হতে চলেছে, ঠিক সেই সময়ে দেরাদুন থেকে জেএনইউর অধ্যাপক রাকেশ আগরওয়াল, বিজু নেগি, বিজয় নেগি, এসএস রাওয়াত, ডক্টর রমিজ রাজা, তানভীর আলম, দীপক শান্ডিল্য, দেবেশ এবং আতিফ খান পরবর্তী যাত্রায় যোগ দিতে এসে পৌঁছালেন । আইপিটিএ জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি রাকেশ বেদা প্রথম থেকেই সঙ্গে ছিলেন । কিছু শারীরিক অক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, যাত্রার জন্য রাকেশ আগরওয়ালের উৎসাহ সত্যিই স্যালুটের যোগ্য ছিল। রাকেশ আগরওয়ালকে উপহারস্বরূপ গামছা দিয়ে রাকেশ বেদা স্বাগত জানান।
অলি গলি পেরিয়ে আত্মহারার দল বিভোর হয়ে ‘ঢাই আখর প্রেম’ গণ সঙ্গীত গাইতে গাইতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। গান-বাজনার প্রেমের সুরে পদযাত্রা মেওয়ার কালা ইমলি রোড জেলা, হরিদ্বারে পৌঁছায়। ইতিমধ্যে, লখনউ লিটল আইপিটিএর সহকর্মীরা সুমন শ্রীবাস্তবের সাথে এই যাত্রায় যোগ দেন।দলটি ‘ইনসান কা ইনসান সে হো ভাইচারা, ইয়েহি পইগাম হামারা’ গানটি গাইতে গাইতে পুরো গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। গ্রামের প্রধান চত্বরে সমাজকর্মী দীপক শান্ডিল্য, তানভীর আলম, মহসিন এবং বিজয় ভাটেকে উপহারস্বরূপ গামছা প্রদান করা হয়। এখান থেকে সুনীল কুমার, দীনেশ কুমার এবং শাহিদা শেখ রুঢ়কি থেকে ‘ঢাই আখর প্রেম’-এর মিছিলে যোগ দেন।
রাকেশ বেদা জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি, ডক্টর ভি কে ডোভাল সভাপতি আইপিটিএ উত্তরাখণ্ড রাজ্য, শ্রী ওমপ্রকাশ নাদিম, ধর্মানন্দ লখেদা, হরিওম পালি, মোহাম্মদ আসাদ খান, কুলদীপ মাধওয়াল, বিজু নেগি, বিজয় ভাট, শ্রীমতি সুমন শ্রীবাস্তব, গরিমা সিং, অঞ্জলি সিং, পুজা প্রজাপতি, আরতি প্রজাপতি, সোনি যাদব, কবিতা যাদব, শিবি সিং প্রমুখ উৎসাহের সাথে গান গাইছিলেন এবং মনের আনন্দে এগিয়ে চললেন ৷ লখনউয়ের লিটল আইপিটিএ টিম মেওয়ার কালা ইমলি রোডের চৌমাথায় গান ও সংগীতের মাধ্যমে ‘ঢাই আখর প্রেম’-এর বার্তা কোণে- কোণে ছড়িয়ে দিল। এরপর গণ সঙ্গীত গেয়ে মিছিলটি মেওয়ার কালা গ্রামের রাস্তা প্রদক্ষিণ করে । মেওয়ার কলা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা সুনীল কুমার, দীনেশ কুমার, বিশ্ব প্রতাপ জি সহ সমাজকর্মী দীপক শান্ডিল্যকে গামছা দিয়ে সম্মানিত করা হয়৷ ফেরার সময় সাহারানপুর আইপিটি এর সঙ্গীরা গণ সঙ্গীত পরিবেশন করেন৷
যাত্রাটি মেওয়ার কলা গ্রাম থেকে বের হয়ে বাজুহেড়ি গ্রামে অবস্থিত কস্তুরবা গান্ধী ছাএাবাসে পৌঁছায়। এখানে, পিপলস ফোরামের সহকর্মী কান্দওয়াল জি এবং কমলেশ খান্তওয়াল জি, যারা দেরাদুন থেকে এসেছিলেন, তারাও যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। শিশুরা আগে থেকেই দলের জন্য অপেক্ষা করছিল। ছোট আইপিটিএ দল কস্তুরবা গান্ধী বিদ্যালয়ে গণ সঙ্গীত পরিবেশন করে। সাহারানপুর আইপিটিএ এর দল গণ সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে ‘গিরগিট’ নামে একটি পথনাটক পরিবেশন করে। উপস্থিত সকলকে সফরের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হয়। স্কুলের ছেলেমেয়েরা লিটল আইপিটিএর বন্ধুদের সাথে একই সাথে গলা মিলিয়ে গান করেন। বিজু নেগি তার বক্তব্যে শিশুদের কাছে সহজ কথায় ভালোবাসার সংজ্ঞা বুঝিয়ে দেন। এরপর জাতীয় আইপিটিএ কার্যনির্বাহী সভাপতি রাকেশ বেদা তার বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে বিকেল হয়ে গেছে এবং আমরা সবাই ক্ষুধার্ত বোধ করছিলাম। ওমপ্রকাশ নূর জির উদ্যোগে পদযাত্রা বাজুহেড়ি গ্রামে বসবাসকারী গীতাজীর বাড়িতে পৌঁছালে, সেখানে দলের সকল সদস্য গরম গরম বিউলীর ডাল দিয়ে ভাত উপভোগ করেন। এখান থেকে বিদায় নিয়ে সব বন্ধু মিলে ভগৎ সিং চৌকে পৌঁছলাম।
সেখানে ভগৎ সিং-এর মূর্তির উপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় এবং পরে গান গাওয়া হয়। সেখানে স্থানীয় লোকজনও যোগ দেন। শহরের মাঝখানের বাজার পেরিয়ে হাজারো চোখের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে-দিতে দলটি পৌঁছে যায় শহীদ স্থল সুনেহরায়। সেখানে আবারও বিপ্লবী গান ও লোকগানের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং ফুলের মালা অর্পণের মাধ্যমে তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করা হয়। এখানে আইপিটিএ সাহারানপুর এবং লিটল আইপিটিএর সহকর্মীদের উপহারস্বরূপ গামছা প্রদান করা হয়৷এখানেই কমলেশ খান্তওয়াল, জগদীশ কুলিয়াল এবং জয়কৃত কান্ডওয়ালকে গামছা উপহার দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল। জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি রাকেশ বেদা উত্তরাখণ্ড পদযাত্রার সফল আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন যে এটি উত্তরাখণ্ডে যাত্রার শেষ নয়, শুরু।
রিপোর্ট- উত্তরাখণ্ডের সাথী, নিতিন ঢলওয়ান, আসাদ আলি খান ও সাহিবা
অনুবাদ -মিত্রা সেন মজুমদার