Bangla | English | Hindi | Kannada | Malayalam
প্রথম দিন, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩:
আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি শহীদ বিপ্লবী ভগৎ সিংহের জন্মদিবস ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, মহাত্মা গান্ধীর শহীদ দিবস পর্যন্ত ৪ মাস ব্যাপী ভারতবর্ষ জুড়ে ‘ঢাই আখর প্রেম সাংস্কৃতিক পদযাত্রার’ সংঘটিত করছে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আইপিটিএ। বর্ণাঢ্য এই সাংস্কৃতিক পদযাত্রার লক্ষ্য হলো জাতীয় জীবনে প্রেম, বন্ধুত্ব, সমতা, ন্যায় এবং মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য রক্ষায় যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের সম্মান জানানো; বরেণ্য সমাজ সংস্কারক, লেখক, কবি, শিল্পী, সাধকদের জন্মভূমি বা স্মারকস্থল স্পর্শ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে এক নতুন ভারতের স্বপ্ন উপস্থাপন করা। মহান সন্ত কবি কবীরের একটি বিখ্যাত দোহা থেকে ‘ঢাই আখর প্রেম কা’ লাইনটি গৃহিত হয়েছে।দোহার মর্মার্থ হলো- শাস্ত্র বা পুঁথিগত বিদ্যায় কেউ জ্ঞানী হয় না।আড়াই অক্ষরের প্রেম শব্দটিকে যিনি আত্মস্থ করেছেন, তিনিই প্রকৃত জ্ঞানী। বিভেদপন্থীরা ভারতবর্ষ জুড়ে যে বিদ্বেষের বীজ বপন করে চলেছে, তার বিরুদ্ধে এই প্রেম ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া সময়ের সব থেকে বড় দাবি।সমস্ত প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং লেখক শিল্পীদের আইপিটিএ আহ্বান জানিয়েছে- গান কবিতা নাটকের মধ্য দিয়ে জাঠায় নিজেদের সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি তুলে ধরার জন্য।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে চিরকাল বাংলা থেকেছে অগ্রণী।দিয়েছে নেতৃত্ব।অতীশ দীপংকর থেকে চৈতন্য, চণ্ডীদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ, লালন থেকে বিজয়, মাইকেল থেকে নজরুল- আরও কত শত কন্ঠে বারংবার উচ্চারিত হয়েছে প্রেম, সাম্য, ন্যায় ও সংহতির বার্তা।তাঁদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে সম্মিলিত যাত্রায় ভারতীয় গণসংস্কৃতি সংঘ ও প্রগতি লেখক সংঘ আগামী ২৮ শে ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে ৩১ শে ডিসেম্বর ২০২৩ রাজ্যব্যাপী পদযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচি নিয়েছে। তারই সূচনা হল গতকাল পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক শহরে। এ দিনের যাত্রার কর্মসূচি ও এলাকার মানুষের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম, বাংলার রেনেঁসাস আন্দোলনের পথিকৃত বিদ্যাসাগর থেকে শহীদ মাতঙ্গিনী হাজরা হয়ে কমিউনিস্ট নেতা বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় এর মর্মর মূর্তিতে মাল্যদানের মাধ্যমে এই যাত্রার সূচনা হয় । ব্রিটিশ রাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রথম স্বাধীন সরকার প্রথম গঠন হয়েছিল এই তমলুক শহরে । সেই তাম্রলিপ্ত সরকারের স্মৃতি সৌধ আমাদের অঙ্গীকার — এই বোধের কারনেই এই শহর কে বেছে নেওয়া হয়েছিল যাত্রার বোধন পর্ব হিসেবে । অগুনতি মানুষ লৌকিক গান ও সুসজ্জিত ঢাকের বাদ্যে পা মিলিয়েছিল এই যাত্রায়। ছিল বাংলার মনীষীদের উদ্ধৃতি সহযোগে অসংখ্য ব্যানার। ছাত্র যুব শিক্ষক বুদ্ধিজীবী রা পা মিলিয়েছেন তাঁদের নিজস্ব ব্যানারে। শিশুরা হেঁটেছে সুসজ্জিত মনীষীর সাজে। বাউল শিশু হেঁটেছে একতারা নিয়ে । সঙ্গে এই যাত্রার কিছু ছবি এই যাত্রার ভাষ্য। কথা নয়, পদযাত্রার আয়োজনই আমাদের ভাষা। আমাদের অঙ্গীকার ।
আসুন, এই জাঠাকে আমরা শক্তি, সহানুভূতি, সম্প্রীতি ও শান্তি কামনায় উৎসর্গ করি। হিংসা এবং বিদ্বেষকে পরাস্ত করে ভালোবাসার জয়ে এই পদযাত্রা কে উৎসর্গ করি।
এই পদযাত্রায় রাজ্য নেতৃত্ব র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ ঘোষ কোষাধ্যক্ষ সুব্রত চন্দ্র অচল হালদার, মহিলা নেত্রী সৌমী হালদার, শশাঙ্ক দাসবৈরাগ্য প্রণব দাস, রাজীব মুখার্জি সৌমিত্র মুখার্জি প্রমুখ। জেলা নেতৃত্বে র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি মনোতোষ পাল, সম্পাদক বিপ্লব ভট্টাচার্য্য, অনিমেষ মান্না, স্বপন মিত্র, মধুসূদন দাস, প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি তপন বর্মণ সম্পাদক নারায়ন বেরা মহিলা নেত্রী শ্যামলী মণ্ডল, ছাত্র নেতা চৈতন্য কুইল্যা, যুব নেতা গৌরাঙ্গ কুইল্যা, অধ্যাপক আশুতোষ দাস , বিশিষ্ট শিল্পী সনাতন দাস । এছাড়াও জাথাকে সাফল্য মন্ডিত করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন গন আন্দোলনের নেতা গৌতম পণ্ডা এবং তপন গাঙ্গুলী। পরিশেষে নৃত্য পরিবেশন করেন মেদিনীপুর জেলার কিশোরী শিল্পীরা এবং বাউল গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন হলদিয়া আইপিসিএ শিশু শিল্পীরা এবং চন্দন মাইতি। অমিতাভ চক্রবর্তীর সংক্ষিপ্ত ভাষণের মাধ্যমে এই সফল পদযাত্রার পরিসমাপ্তি ঘটে।
ঢাই আখর প্রেম পদযাত্রার দ্বিতীয় দিন – হাওড়ার বার্তা : শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে
আমাদের মস্তিষ্ক দখল নিতে চাইছে বর্তমান শাসক– এমন এক কথা বলে আজকের হাওড়ার সাঁকরাইল এর ঢাই আখর প্রেম পদযাত্রার সুর বেঁধে দিলেন প্রগতি লেখক সংঘের রাজ্য সম্পাদক কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর । আজ ছিল চার মাস ব্যাপী সর্বভারতীয় পদযাত্রার পশ্চিমবঙ্গের কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন। যাত্রার সূচনা হয় সাঁকরাইলের বড় পীরতলা থেকে । ঘৃণা বিদ্বেষ ভুলে সংহতির বার্তা নিয়ে এক সুসজ্জিত জাঠা গান গাইতে গাইতে, মনীষীদের উদ্ধৃতি সহযোগে পোস্টার ব্যানার হাতে নিয়ে আবালবৃদ্ধবনিতা পায়ে পায়ে হেঁটে হাজির হয় স্টার স্পোটিং ক্লাব প্রাঙ্গণে । এই মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর, অমিতাভ চক্রবর্তী, অমলেন্দু দেবনাথ, পার্থ প্রতিম কুণ্ডু দেবাশিস ঘোষ শান্তিময় রায়, । এছাড়াও পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন চিরঞ্জীব চন্দ্র, দিলীপ গাঙ্গুলী, সমীর মুখার্জি, শরিফুল আনোয়ার সুবীর মণ্ডল শাখোয়াৎ হোসেন, সৌমী হালদার শ্যামল মণ্ডল প্রমুখ । তারপর ক্লাব প্রাঙ্গণে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় । কাদের লস্করের……. উদ্বোধনী গান দিয়ে সাংস্কৃতিক সূচনা হয়। শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন অমলেন্দু দেবনাথ, কপিলকৃষ্ণঠাকুর, অমিতাভ চক্রবর্তী সুনীল কোলে প্রমুখ ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, যে এলাকায় এই পদযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সংগঠিত হলো, সেটি মুলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসতিপূর্ণ । সম্প্রতির বার্তা নিয়ে এক সুসজ্জিত মিছিল তাঁদের এলাকায় পরিক্রমা করছে দেখে অনেকেই সংগঠনের পরিচয় জানতে চাইছেন । স্বতস্ফূর্ত ভাবে মিছিলের পাশে হাঁটতেও দেখা যায় কয়েকজনকে । অনেকে দাঁড়িয়েও শুনছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । এটাই মনে হয় আজকের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
যেমন ‘ডেলিভারি বয়’ নুর আলম যাচ্ছিলেন বাইক নিয়ে , কিম্বা অটো চালিয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন সদাশিব । দুজনেই দাঁড়িয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ দেখে চলে যাচ্ছিলেন। জিজ্ঞাসা করলাম, কিরকম লাগল? আমাদের কথায় তো বলছে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম । সময় নেই । মাল পৌঁছে দিতে হবে তো সময় মতো। আর আশ্চর্যের বিষয় অটো চালক যখন ক্ষণিকের জন্য দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, ভেতরে বসে থাকা দুই তরুণও কোনো প্রতিবাদ করে নি । বরং তারাও মোবাইল ঘাঁটা বন্ধ করে অনুষ্ঠান দেখছিলেন । বোধের অজান্তেই এঁদের তাড়া দেখে রানারের গান ভেসে এলো কানে — শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে আজকের আধুনিক রানাররা ।
বোরখা পরে ছোট্ট মেয়ের হাত ধরে দেখছে নাটক।
নাম জিজ্ঞাসা করতে লজ্জায় কথা সরলো না মুখ থেকে । পাশের একজন বলে দিলেন, নাসিফা খাতুন । ভালো লাগছে জিজ্ঞাসা করলে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো শুধু ।
কবীরের দোঁহা ঢাই আখর প্রেম নামের তাৎপর্য এখানেই লুকিয়ে আছে । এই পদযাত্রার সার্থকতা এখানেই
যখন নাট্যকথা দলের নাটক হে ধর্ম, হায় ধর্ম এ ধুর্যটীপ্রসাদ মুখার্জির বার্তা নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন জনৈক অভিনেতা, ধর্মীয় মোড়কে পনের লাখ টাকার প্রতিশ্রুতি গুলিয়ে দিচ্ছিলেন, তার বিপরীতে যখন জনগনের প্রশ্ন শুনে ধর্ম ধর্ম করে ল্যাজ গুটিয়ে পালাল,তাই দেখে সমবেত দর্শকদের হাততালির শব্দ শুনে বোঝা গেল মনের অন্তস্তলে প্রবেশ করাতে পেরেছে এই নাটক। কাকতালীয় কিনা জানি না , পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বিশেষ ধর্মাবলম্বী দর্শকদের হাততালির শব্দ যেন একটু বেশিই ছিল।
এর থেকে বেশি বৈপ্লবিক ভাবনা আর কি হতে পারে আই পি টি এ র ‘ঢাই আখর প্রেম’ পদযাত্রার এই সিদ্ধান্ত বর্তমানের বিভ্রান্ত সময়ে ?
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন শাশ্বতী বেরা ,নুপুর জোয়ারদার , রাজনীল মুখোপাধ্যায়, প্রনব দাস , দেবস্মিতা নিয়োগী, রুমা রক্ষিত,সুখেন্দু মণ্ডল এবং বাইনানের ইচ্ছা পূরণ গোষ্ঠীর সানন্দা , সুপর্ণা , আরাধ্য, সুহৃদা অঙ্কিতা প্রমুখ । সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রাজীব মুখোপাধ্যায় ।
ঢাই আখর প্রেম সাংস্কৃতিক পদযাত্রার তৃতীয় দিন – কলকাতার বুকে সম্প্রীতির বার্তা
বিভাজন নয় । বৈষম্য নয়। বিভেদ নয় । সম্প্রীতি ও ঐক্য চাই। এই লক্ষ্য কে সামনে রেখে শনিবার 30শে ডিসেম্বর কলকাতার ঐতিহাসিক কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগর মূর্তির পাদদেশ থেকে স্বামী বিবেকানন্দর বাসভবন এবং তারপর জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত সম্প্রীতির পদযাত্রা করলো আই পি সি এ। সহযোগী হিসেবে এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন প্রগতি লেখক সংঘ রাজ্য কমিটি এবং উত্তরাধিকার। এদিন আই পি সি এ ও প্রগতি লেখক সংঘের এক প্রতিনিধিদল বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের বাসভবন পর্যন্ত যায়।
স্বাগত ভাষণে আই পি সি এ এর রাজ্য সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন 28শে ডিসেম্বর স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রভূমি তমলুক 29শে ডিসেম্বর হাওড়া জেলার সাঁকরাইলে এবং 30 তারিখের পদযাত্রা কলকাতায় হচ্ছে। এদিন কলেজ স্কোয়ারে সম্প্রীতি যাত্রা শুরু হবার আগে বিদ্যাসাগরের মূর্তির পাদদেশে যে সভা হয় তার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তক ও গবেষক শমীক বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেন, একটা গভীর সংকটের মধ্যে চলছে আমাদের দেশ। যে শক্তি আজ আমাদের দেশের ক্ষমতায় তারা প্রতি মূহুর্তে দেশের সম্প্রীতিকে নষ্ট করছে, বহুত্ববাদী সংস্কৃতি কে ধ্বংস করছে, সংখ্যালঘুদের ওপর ও পিছিয়ে পড়া মানুষের ওপর আক্রমণ করছে। প্রতি মূহুর্তে এই সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট শক্তি সংবিধান কে অপমান করছে সংসদে বিরোধী কণ্ঠকে রূদ্ধ করছে
দেশের সম্পদকে জলের দামে কর্পোরেটের হাতে তুলে দিচ্ছে। এই কর্পোরেট সাম্প্রদায়িকতা আমাদের দেশকে বড় বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাই দেশের সচেতন নাগরিকদের কাছে আমাদের আবেদন যেভাবেই হোক এই সাম্প্রদায়িক শক্তি কে মোকাবেলা করতে হবে। এদিনের সভায় উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন আবদুল কাদের লস্কর। তাছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন অতিক্রম দাস ও প্রবাল সরকার। আবৃত্তি করেন মণিকা মৃধা । কলেজ স্কোয়ারে সংক্ষিপ্ত সভার পর বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন শমীক বন্দোপাধ্যায়, আইপি সি এ এর চেয়ারম্যান অমলেন্দু দেবনাথ, অমিতাভ চক্রবর্তী ও সংগঠনের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক শান্তিময় রায় এবং প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ঞ ঠাকুর। এছাড়াও মাল্যদান করেন পরিচয় পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক পার্থ প্রতিম কুণ্ডু আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাবের সভাপতি গৌতম ঘোষ , অচল হালদার রাজীব মুখার্জি তাপস মৈত্র অরুণ চট্টরাজ সঞ্জয় দাস সুবীর মুখোপাধ্যায় সুবীর বন্দোপাধ্যায় রাজনীল মুখোপাধ্যায় নারায়ন বিশ্বাস সুনীল চক্রবর্তী, সুব্রত চন্দ্র, সৌমিত্র মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ খান, রবীন্দ্রনাথ দে, নন্দ সেনগুপ্ত, অনীশ চট্টোপাধ্যায়, শশাঙ্ক দাসবৈরাগ্য, সাহানা খাতুন শ্যামল মান্না প্রমুখ। এরপর কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগর মূর্তির পাদদেশ থেকে শুরু হয় পদযাত্রা । এই পদযাত্রায় আই পি সি এ এবং প্রগতি লেখক সংঘের নেতৃত্ব ছাড়াও অসংখ্য শিল্পী সাহিত্যিক শিক্ষক ছাত্র ছাত্রী মহিলা এবং সাধারণ মানুষ সামিল হন। এরপর পদযাত্রীরা উপস্থিত হন স্বামী বিবেকানন্দর বাসভবনে। সেখানে বিবেকানন্দর মূর্তিতে মাল্যদান পর্বের পর সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সংগীত পরিবেশন করেন নবকুমার, অনন্যা চন্দ্র, অচল হালদার যতীন চন্দ্র। আবৃত্তি করেন কৌশিক ঘোষ। অশোকনগর আই পি সি এ এর শিল্পীরা পরিবেশন করেন নাটক এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শান্তিময় রায় এবং দেবাশিস ঘোষ । এরপর কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে পদযাত্রীরা উপস্থিত হন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তিতে মাল্যদান করার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তৃতীয় দিনের পদযাত্রা।
ঢাই আখর প্রেম সাংস্কৃতিক পদযাত্রার চতুর্থ দিন বারাসাতে
বিভেদকামী শক্তি দেশকে একটু একটু করে ভাঙ্গছে। বর্তমান দেশের শাসকশ্রেণী সাংঘাতিক ভয়ঙ্কর। এই শক্তি কে রুখতে না পারলে দেশ ও দেশের মানুষের সমূহ বিপদ। বিদায়ী বছরের শেষ। নতুন বছরে দেশের ঐক্য সংহতি এবং সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা আমাদের পৌঁছে দিতে হবে। হিংসা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে মিলনের কথা আমাদের বলে যেতে হবে। এই বার্তা দিয়ে রবিবার উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের বুকে সংগঠিত হলো ঢাই আখর প্রেম সাংস্কৃতিক পদযাত্রার চতুর্থ দিন। জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা ছাড়াও সামিল ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্র, উর্দু সাহিত্যিক জ্যানিফ আনসারী ফাদার সুনীল রোজারিওর মতো ব্যক্তিত্ব গণ।
উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইতিহাস সমৃদ্ধ। সাহিত্য সংস্কৃতির পীঠস্থান এই জেলা। এই জেলার ব্যারাকপুর থেকে ব্রিটিশ বিরোধী প্রথম সিপাহী বিদ্রোহী স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়। এখানে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ দীনবন্ধু মিত্র প্রমুখ শিল্পী সাহিত্যিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী রা এখানকার সার্বভৌমত্ব কে সমৃদ্ধ করেছে। এই ঐতিহ্যের সিঁড়ি বেয়ে আই পি টি এ এবং প্রগতি লেখক সংঘ তিন মাস ধরে ভারতজুড়ে সম্প্রীতি ধর্মনিরপেক্ষতা গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে যে ঢাই আখর প্রেম সাংস্কৃতিক পদযাত্রার ডাক দিয়েছে তার অঙ্গ হিসেবে এই রাজ্যব্যাপী কর্মসূচি 28শে ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে চতুর্থ দিন বারাসাতের বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মূর্তির পাদদেশ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। অসংখ্য শিল্পী সাহিত্যিক লেখক কবি , রাজনৈতিক এবং গণ আন্দোলনের নেতা, শিক্ষক শিক্ষিকা ,শ্রমিক, কৃষক সহ শ্রমজীবী মানুষ এই পদযাত্রায় পা মেলায়। বারাসাত আদালত,বড় বাজার, কে এন সি রোড ধরে হরিতলা বারাসাত সরকারী স্কুল কলেজ, হাটখোলা যশোর রোড ধরে পদযাত্রা শেষ হয় বারাসাত এ্যাশোসিয়েশন ময়দানে। পদযাত্রা আসার পথে দেশের সম্প্রীতি ও ঐক্যের জয়গান গেয়েছেন যাহারা সেই সব মনীষীদের ছবি ও প্লাকার্ড ফেস্টুন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল লালন প্রমুখের গান গেয়ে পথ হাঁটেন শিল্পীরা। মানুষে মানুষের সম্প্রীতির এই পদযাত্রায় বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রাক্তন সাংসদ জননেতা চিত্ত বসু, বাবাসাহেব আম্বেদকর প্রমুখ মনীষীদের মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ।
এরপর বারাসাত এ্যাশোসিয়েন ময়দানে মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় সম্প্রীতি রক্ষার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রেম প্রীতি ও ঐক্য রক্ষার আবেদন। এই আবেদনে বিশিষ্ট সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্র বলেন দেশের বিভেদকামী শক্তি দেশকে একটু একটু করে ভাঙ্গছে। বর্তমান শাসক শ্রেণীর সাংঘাতিক ভয়ঙ্কর। তিনি বলেন এই বিভেদকামী শক্তি চিরকাল দেশে হিন্দু মুসলিম, জাতিতে জাতিতে বিভেদ সৃষ্টি করে দেশকে দুর্বল করে এসেছে। কিন্তু এই শক্তি প্রতিরোধের জন্য সম্প্রীতির পথে, ঐক্যের পথে মানবতা মিলনের কথা প্রচার করেছেন প্রগতি ও গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ। কিন্তু বর্তমানে শাসকশ্রেণী এই ঐক্য দুর্বল করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে আই পি টি এ এবং প্রগতি লেখক সংঘ ঢাই আখর প্রেম যাত্রার ডাক দিয়েছে। এই ডাক আমাদের সবাইকে কণ্ঠ করে দেশরক্ষা ও ভাঙন রোধে শপথ নিতে হবে। কালান্তর পত্রিকা সম্পাদক কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন বিদায়ী বছরের শেষ দিন আজ। নতুন বছরে দেশের ঐক্য সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা আমাদের পৌঁছে দিতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি ফিদেল কাস্ত্রোর কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ঢাই আখর প্রেম যাত্রার মর্মার্থ ব্যাখ্যা করেন উর্দু সাহিত্যিক জ্যানিফ আনসারী। ফাদার সুনীল রোজারিও বলেন হিংসা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে মিলনের কথা আমাদের বলে যেতে হবে। আই পি সি এ এর রাজ্য সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তী, গণসংস্কৃতি পরিষদ নেত্রী শোভনা নাথ তাদের বক্তব্য রাখেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ঞ ঠাকুর, সভাপতি অমলেন্দু দেবনাথ, আই পি সি এ এর রাজ্য যুগ্ম সম্পাদক দেবাশীষ ঘোষ, পরিচয় পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক পার্থ প্রতিম কুণ্ডু, প্রগতি লেখক সংঘের জেলা সভাপতি ডাঃ সুজন সেন, গণ আন্দোলনের নেতা শৈবাল ঘোষ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সূচনা সংগীত পরিবেশন করেন প্রদ্যুত রঞ্জন চক্রবর্তী। প্রখ্যাত মূকাভিনেতা শান্তিময় রায় মূকাভিনয় পরিবেশন করেন। এছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন নজরুল চর্চা কেন্দ্র, আই পি সি এ বারাসাত, হৃদয়পুর শাখায় শিল্পীরা। এছাড়াও অনেক শিল্পী গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। অশোকনগর আই পি সি এ শাখা মঞ্চস্থ করে তাদের জনপ্রিয় নাটক এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তাপস মৈত্র। সবশেষে বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসার গান ও শ্লোগানে মুখরিত করে শেষ হয় এই ঐতিহাসিক পদযাত্রা।
Report: Debasish Gosh