Categories
Report

রাজস্থানে পাঁচ দিনের পদযাত্রায় সংস্কৃতির রামধনু বিচ্ছুরণ

Read in: हिन्दी | English | বাংলা | ಕನ್ನಡ | മലയാളം

রাজস্থান থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ শুরু হয়েছে ‘ঢাই আখর প্রেম’ সাংস্কৃতিক পদযাত্রা, যা শেষ হবে দিল্লিতে ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক সংগঠন, সাহিত্যিক, নাট্যকর্মী, সঙ্গীতকার, অভিনেতা, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকার কর্মী, এবং গঙ্গা-যমুনা সংস্কৃতির ধারক আর সমর্থক মানুষ এতে যোগ দিয়েছেন। এই যাত্রার মধ্যে দিয়ে পারস্পরিক প্রেম, সৌভ্রাতৃত্ব, সামাজিক ন্যায় আর শান্তির বার্তা নিয়ে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান হবে। এই যাত্রা দেশের গঙ্গা-যমুনা সংস্কৃতির, স্বাধীনতা, সাম্য আর ঐক্যকে সমাজে ফের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।   ,  

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ : বৃহষ্পতিবার

যাত্রার আগের দিনই আলোয়ারে জননাট্য মঞ্চ (জনম) তাদের পথনাটক ‘সাঞ্ঝী কে চদরিয়া’ তিনটি আলাদা আলাদা জায়গায় তিনবার প্রদর্শন করে। মলয়শ্রী হাশমি আর তার টিম আলয়ারের বিবেকানন্দ চক, হোপ সার্কাস আর কোম্পানি বাগে দুপুর ২টো থেকে ৫টা পর্যন্ত পথনাটকের সঙ্গে গান আর ব্যাঙ্গাত্মক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সমাজের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির টানাপোড়েন ও ঐতিহাসিক তথ্যাবলি সুন্দর গ্রন্থনার দ্বারা পেশ করেন। দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের সংস্কৃতি, করোনার সময়ে মানুষের কষ্ট, সন্ত কবি তুলসীদাস ও কবি রহিমের বন্ধুত্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়। বন্ধুত্বের চাদর গায়ে দিয়ে জীবনের অনেক সমস্যার করা যায়। ঢাই আখর প্রেম পদযাত্রায় যেভাবে মেহনতি মানুষের শ্রম আর ভালবাসার প্রতীক হিসেবে গামছাকে জুড়ে নেওয়া হয়েছে, তাদের নাটকের উপস্থাপনার সময় তার সফল প্রয়োগও দেখা গেল। এক অভিনেত্রী একটি চৌকাটের জায়গায় বসে চরখায় রঙিন সুতোর টানাপোড়েন তুলছিলেন।

ব্রিজেশের লেখা এই নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন আত্মন আর কোমিতা। অভিনয় করেছেন অশোক, ব্রিজেশ, দিস্তা, কোমিতা, কৃতার্থ, মলয়শ্রী, প্রিয়ঙ্কা, পূর্বাশা, ঋদ্ধিজিত, সাচী আর বিজয়।

হোপ সার্কাসে ছত্তিশগড়ের সাথী নিসার আলী আর তার সঙ্গীরা ‘গামছা বেচোয়া’ নামে একটি নাটক প্রদর্শন করেন। আর্থিক সহায়তা চেয়েও দর্শকদের কাছে গামছা পেতে দিয়েছেন। এখানে স্থানীয় মিষ্টি বিক্রেতারা সবাইকে আলোয়ারের প্রসিদ্ধ মিল্ক কেক খাইয়েছেন। কোম্পানি বাগে নাটক অভিনয়ের পর হরিশঙ্কর গোয়েল আলোয়ার সম্পর্কে দারুণ একটি তথ্য দেন। সেই সঙ্গে বিবেকানন্দের রাজস্থানে বসবাসের কথা বলেন। নাটকের পর জননাট্য মঞ্চের মলয়শ্রী হাশমি, ইতিহাসবিদ হরিশঙ্কর গোয়েল, অধ্যাপক শম্ভু গুপ্ত, অধ্যাপক রমেশ বৈরবা, এডবা-র প্রদেশ সহসভাপতি রইসা, রাজস্থান ইপ্টার প্রদেশ সভাপতি জগদীশ শর্মা এবং মহাসচিব সঞ্জয় বিদ্রোহী, ভারত পরিবারের বীরেন্দ্র ক্রান্তিকারী, কার্যনির্বাহী সভাপতি রাকেশ বেদা ও বাইরে থেকে আসা অন্যান্য সাথীদের গামছাকে উত্তরীয়র মতো পরিয়ে স্বাগত জানানো হয়।

কোম্পানি বাগ থেকে বন্ডর মল, রাজকীয় মহিলা হাসপাতাল হয়ে এই পদযাত্রা ভগত সিং চৌরাহায় পৌঁছায়। সেখানে সেদিনের মতো যাত্রা সমাপ্ত হয়।

সব মানুষের মধ্যে সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্ব স্থাপনের লক্ষ্যে খুব অল্প বয়সে শহিদ হওয়া ভগত সিং-এর জন্মদিন ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে ‘ঢাই আখর প্রেম’ পদযাত্রা শুরু হয়েছে, যাতে তার বিচারধারার উপর পারস্পরিক আলোচনা হতে পারে।

নাটক উপস্থাপনার পর পায়ে হেঁটে সবাই ভগত সিং-এর মূর্তির পাদদেশে পৌঁছায়। সেখানে পুষ্পার্ঘ্য দেন ইপ্টার সর্বভারতীয় সভাপতি প্রসন্ন, কার্যনির্বাহী সভাপতি রাকেশ, কর্ণাটকের রাজ্যসভা সদস্য অনিল হেগড়ে, ‘বাপু কে লোক’ সংগঠনের সংযোজক বিজয় প্রতাপ, তনবীর আলম, প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুখদেব সিং সিরসা, ছত্তিশগড় প্রগতি লেখক সঙ্ঘের সভাপতি নাথমল শর্মা, রাজস্থানের জনবাদী লেখক সঙ্ঘের সভাপতি জীবন সিং মানবী, নাট্য নির্দেশক বেদ প্রকাশ, ইপ্টার সর্বভারতীয় সম্পাদক শৈলেন্দ্র কুমার, যুগ্ম সম্পাদক অর্পিতা শ্রীবাস্তব, রাষ্ট্রীয় সেবা দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদ কামাল, অবধেশ কুমার, জন আন্দোলন এর রাষ্ট্রীয় সংযোজক কৈলাশ মীণা, আলোয়ারের হরিশঙ্কর গোয়েল, এবং অধ্যাপক শম্ভু গুপ্ত। সকলেই নিজেদের ভাবনা ব্যক্ত করেন। সোয়াই মাধোপুর ইপ্টার টিম গণসঙ্গীত গেয়ে শোনান। অর্থ আগরওয়াল নামে একটি শিশু কবীরের দোঁহা শোনান। 

এই উপলক্ষ্যে ‘ঢাই আখর প্রেম’ পদযাত্রার রাজস্থানের সংযোজক সর্বেশ জৈন, এডবা-র সহ সভাপতি রাইসা, জনবাদী লেখক সঙ্ঘের জেলার সহ সভাপতি ছঙ্গারাম মীণা, ঘনশ্যাম শর্মা, ভারত পরিবারের সভাপতি বীরেন্দ্র ক্রান্তিকারী, সরিতা ভারত, ইপ্টার জেলা সভাপতি মহেন্দ্র সিং, প্রদীপ মাথুর, দেবেন্দ্র শর্মা, মোহনলাল গুপ্ত, এমএমএসবিএস-এর অনুপ দায়মা, সৃজক সংস্থানের রামচরণ রাগ, শহিদ ভগত সিং সমারোহ সমিতির যোগেন্দ্র সিং কোচার, প্রমোদ মালিক, অধ্যাপক রমেশ বৈরবা, অধ্যাপক মীনেশ জৈন, অর্থ আগরওয়াল এবং প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘ, দিল্লির অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানচান্দ বাগড়ি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের একতি বিশেষ দিক হল, এতে বিপুল সংখ্যায় শিশুরাও ছিল আর তাদের উৎসাহও ছিল দেখার মতো। পদযাত্রার মধ্যেই এসে কথা বলেন দৈনিক ভাস্কর-এর সাংবাদিক।

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, শুক্রবার :

রাজস্থানে ‘ঢাই আখর প্রেম রাষ্ট্রীয় পদযাত্রা’-র দ্বিতীয় দিনের যাত্রা মোতি ডুংরি থেকে শুরু হয়, যেখানে একসঙ্গে সৈয়দ বাবার মাজার আর হনুমান মন্দির আছে। পিপাড়-এর লিটল ইপ্টার বাচ্চারা ‘সদ্ভাবনা’ নাটক অভিনয় করে। মোতি ডুংরির বিষয়ে জানালেন জীবন সিং মানবী। মোতি ডুংরি থেকে রওনা হয়ে নেহরু গার্ডেন পৌঁছে অমর শহিদ চন্দ্রশেখর আজাদকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। সেখান থেকে বিবেকানন্দ স্মারক, ভগত সিং সার্কল, তুলা রাও সার্কল, হাসান খাঁ মেওয়াতি প্যানোরামা হয়ে ভর্তৃহরি প্যানরামা, ঝোলি দুবের লালদাস মন্দির পৌঁছায়।

লালদাস মন্দিরে দুপুরের খাওয়ার পর লিটল ইপ্টা, পিপাড় ‘মহঙ্গাই কি মার’ নাটক অভিনয় করে। ছত্তিশগড়ের সাথী নিসার আলীর টিম নৃত্যগীতে প্রেম আর সৌহার্দ্যর বার্তাবাহী নাটক উপহার দেয়। জগদীশ শর্মা আর তার টিম লালদাস ও সুরদাস সম্বাদ এর গুরুত্ব এবং রাজহংস শর্মা লালা লাজপত রায়ের মাধ্যমে দেশপ্রেমের বার্তা দেন। এই উপলক্ষ্যে এডবা-র সহ সভাপতি কাজল লোকনৃত্য উপহার দেন। ইতিহাসবিদ হরিশঙ্কর গোয়েল লালদাসের বিষয়ে বিস্তারিত বলেন।

নাটক অভিনয়ের আগে ইপ্টার সর্বভারতীয় সভাপতি প্রসন্ন সমাজকর্মী ও অভিনেতাদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ডাক দেন। প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুখদেব সিং সিরসা পাঞ্জাবের সংস্কৃতিতে নিবিষ্ট প্রেমভাবনা বুল্লে শাহর রচনা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে মিলিত সংস্কৃতির গুরুত্ব বিশ্লেষণ করেন। অধ্যাপক শম্ভু গুপ্ত গণ আন্দোলনের আধুনিক উপকরণ ও পদ্ধতি ব্যবহারের উপর জোর দেন। ভারত পরিবারের সর্বভারতীয় সভাপতি বীরেন্দ্র ক্রান্তিকারী যাত্রার বিভিন্ন পর্বের কাজ ও পদ্ধতি নিয়ে বলেন। দিল্লির প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের সভাপতি জ্ঞানচান্দ বাগড়ি গজল গেয়ে শোনান। এই পর্বে ধোলিদুব পর্বের খাওয়া ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল মূলচান্দ জাগিরের নেতৃত্বে লাইফ সেভার টিম।

পদযাত্রা লালদাস মন্দির থেকে বিকেল পাঁচটায় রওনা হয়ে ঠেকড়া গ্রামে পৌঁছায়। গ্রামপ্রধান তারাচান্দ রাজ্য সরকারের মাধ্যমিক স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেখানে নিসার আলী আর তার সাথীরা গামছার উপর ভিত্তি করে তৈরি নাটক উপস্থাপন করেন। গণসঙ্গীত ‘রাহ পর নীলাম হামারি ভুখ নেহি হো পায়েগি’ গাওয়া হয়। বিহার ইপ্টার সদস্য আর বর্তমান ভারত পরিবার তথা এবিপি নিউজ মধুবনীর সুমন সৌরভ ‘আমরা করব জয়’ গানটি গেয়ে শোনান। পিপাড় ইপ্টা মেশিন নাটক মঞ্চস্থ করে। ঠেকড়া গ্রামের প্রধানকে প্রসন্ন একটি গামছা উপহার দেন।

পদযাত্রায় নাট্য নির্দেশক বেদা রাকেশ, ইপ্টার জাতীয় সম্পাদক শৈলেন্দ্র কুমার, যুগ্ম সম্পাদক অর্পিতা শ্রীবাস্তব ও বর্ষা আনন্দ, অবধেশ কুমার, জনবাদী লেখক সঙ্ঘের রাজস্থান শাখার সভাপতি জীবন সিং মানবী, সমাজকর্মী হরিশঙ্কর গোয়েল, সৃজক সংস্থান এর রামচরণ রাগ, জনবাদী লেখক সঙ্ঘের আলোয়ার শাখার সম্পাদক ভরত মীণা, এডবা-র সহ সভাপতি রাইসা, ভারত পরিবারের সরিতা ভারত, ইপ্টার জেলা সভাপতি মহেন্দ্র সিং, প্রদীপ মাথুর, দেবেন্দ্র শর্মা, মোহন লাল গুপ্তা, কান্তি জৈন, কিশন খরালিয়া প্রমুখ ছিলেন।

জনবাদী লেখক সঙ্ঘের রাজস্থান শাখার সভাপতি জীবন সিং মানবী আলোয়ারের নানা জায়গায় ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব উপস্থাপিত করে ২৮ এবং ২৯ সেপ্টেম্বরের পদযাত্রা সম্পর্কে তার মতামত দিয়েছেন –

দেশের কিছু সংস্কৃতি জনবাদী লেখক সঙ্ঘের কর্মী, বিশেষ করে সর্বভারতীয় গণনাট্য সংঘ (ইপ্টা) একটি সাংস্কৃতিক অভিযানের কর্মসুচিতে সারা দেশের নানা অঞ্চলে ‘ঢাই আখর প্রেম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সদ্ভাব যাত্রা শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল ২৮ সেপ্টেম্বর শহিদ-এ-আজম ভগত সিং এর জন্মদিনে রাজস্থানের পূর্ব দরজা আলোয়ার থেকে তার শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, আলোয়ার আজ থেকে নয়, গত পাঁচ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে মিলিত সংস্কৃতির অঞ্চল ছিল। মধ্যবর্তী সময়ে এর প্রভাব খুব বেশি ছিল। ভক্তি আন্দোলন একে ব্যপকতা আর গভীরতা দিয়েছে। এখানকার মেও পরিবারে, যাদের অধিকাংশই মুসলিম এবং কিছু হিন্দু, লালদাসের মতো সন্তের জন্ম হয়েছে, যার ফলে হিন্দু এবং মুসলমান ধর্মের বদলে মানবতা প্রধান ধর্ম হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘দীনু দীনন সু জায়েগো, লালদাস কে সাধ। 

আধুনিক সময়েও এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মতো বিকশিত হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে গত কিছু বছরে দেশের মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করে ক্ষুদ্র এবং সংকীর্ণ বিষাণু তার উপর হামলা করেছে, যা ক্ষমতা দখলের এই ধরণের কাজকর্ম করছে। এভাবে ঘৃণাভিত্তিক রাজনীতিকে গান্ধীবাদী সদ্ভাবনার সংস্কৃতি দিয়েই দূর করা সম্ভব। তারই অঙ্গ হিসেবে আজ, দ্বিতীয় দিনে, যাত্রা শুরু হয়েছে সকাল সাতটায় মোতি ডুংরিতে অবস্থিত সৈয়দ বাবার মাজার আর হনুমান মন্দিরের মতো দুই ধর্মের সংযুক্ত পরিসর থেকে। উল্লেখ্য, এই যাত্রায় জনবাদী মহিলা সমিতি, জনবাদী লেখক সঙ্ঘ, সৃজক সংস্থান, ভারত পরিবার ইত্যাদি এখানকার সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোয়ারের ইপ্টার সঙ্গে সহযোগিতা করার ভাবনায় যোগ দিয়েছে।

আজ এই যাত্রা শহিদ চন্দ্রশেখর, বিবেকানন্দ স্মারক, আম্বেদকর চৌমাথা, রাও তুলারামে স্থাপিত মূর্তিতে মাল্যদান করে হাসান খাঁ মেওয়াতি প্যানোরামা আর রাজর্ষি ভর্তৃহরি প্যানোরামা হয়ে ধোলিদুব গ্রামে সন্ত লালদাস মন্দিরে পৌঁছেছে। সেখানে ছত্তিশগড়ের নৃত্যের শিল্পীরা একটি নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। এই যাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইপ্টার সভাপতি কর্ণাটকের বাসিন্দা প্রসন্ন। এই পদযাত্রায় মহিলাদের অংশগ্রহণ খুব উৎসাহব্যাঞ্জক। যোধপুরের পিপাড় এলাকার শিশু নাট্যকর্মীদের টিমের উৎসাহ দেখার মতো। যোধপুর, জয়পুরের অভিনেতারাও এতে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন। আলোয়ারে এর ব্যবস্থাপনা ও সঞ্চালনা করছেন আলোয়ার ইপ্টার সম্পাদক ডা. সর্বেশ জৈন, জনবাদী মহিলা সমিতির নেত্রী রাইসা, জলেস এর আলোয়ার শাখার সম্পাদক ডা. ভরত মীণা। এই যাত্রা তিন দিন ধরে আশেপাশের গ্রামে সদ্ভাবনার বার্তা দিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করবে এবং গ্রামেই রাত্রিযাপন করবেন। দোসরা অক্টোবর যাত্রা আলোয়ারে ফিরে যাবে।

আলোয়ারে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ শুরু হয়ে জাতীয় সাংস্কৃতিক সদ্ভাবনা যাত্রা ‘ঢাই আখর প্রেম’ ইপ্টার জাতীয় সভাপতি প্রসন্নর নেতৃত্বে সম্পূর্ণ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে আলোয়ারের আশেপাশের ঐতিহাসিক গ্রামগুলি ঘুরে ২ অক্টোবর সমাপ্ত হয়েছে। আনন্দের বিষয় হল, প্রতিদিন এতে আলোয়ারের বাইরে থেকে আসা সাংস্কৃতিক ও সমাজকর্মীরা যোগ দিয়েছেন। আরেকটি উল্লেখনীয় বিষয় হল, এর যাবতীয় ব্যবস্থাপনা গ্রামবাসীরাই আনন্দের সঙ্গে করেছেন। এই ধরনের গতিশীল ঐক্যবদ্ধ সাংস্কৃতিক উদ্যোগ লুকনো সত্যকে সামনে আনার কাজ করে, যা বলে দেয়, মানুষ প্রেম আর সদ্ভাবনার সঙ্গেই বসবাস করতে চায়।

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ : শনিবার

ঠেকড়া গ্রামে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্রাম নেওয়ার পর ৩০ তারিখ সকালে গ্রামপ্রধান তারাচান্দের সঙ্গে গ্রামের প্রবীণ নাগরিকেরা এবং সমস্ত পদযাত্রী প্রভাতফেরী করেন। তার পর পদযাত্রীদের প্রাতঃরাশ করিয়ে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের স্লোগানের সঙ্গে পদযাত্রীদের গ্রাম থেকে বিদায় জানানো হয়।

তৃতীয় দিন সকালে গন্তব্য ছিল চরণদাসের মাজার। সকালে ঠেকড়া গ্রাম থেকে রওনা হয়ে ডেহরা গ্রামে চরণদাসের মাজারে পৌঁছায়। এই গ্রামেই সন্ত চরণদাসের জন্ম। সেখানে একটি মন্দির বানানো আছে। সমাজে সদ্ভাবনার জন্য সন্ত চরণদাস অনেক কাজ করেছিলেন। সম্প্রতি ১৮ সেপ্টেম্বর তার ৩২১ তম জন্মদিবস উপলক্ষ্যে এখানে মেলা হয়েছে। ডেহরা গ্রামের প্রধান ভীম সিং জোনওয়াল পদযাত্রীদের স্বাগত জানান। সামান্য কিছু খাওয়ার পর গ্রামের প্রবীণদের সঙ্গে ‘ঢাই আখর প্রেম’ পদযাত্রার উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা হয়। সকলেই বলেন, আজকের সমাজে প্রেম এবং সৌভ্রাতৃত্বই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হাতিয়ার। এই সময়েই মন্দিরে সমাগত নরেগা-র ৩০ জন মহিলা কর্মীর সঙ্গেও আলোচনা হয়। তারা চরণদাসের তিনটি ভজন গেয়ে শোনান এবং তার অর্থ বুঝিয়ে দেন। এর পর তারা লোকনৃত্য পরিবেশন করেন, যাতে ইপ্টার অর্পিতা নিজের আনন্দে যোগ দেন। এই গানগুলিতে লোক-ভক্তির আড়ালে মানব কল্যাণের কথা বলা হয়েছে। ছত্তিশগড়ের নিসার আলী ও তার সাথীরা ‘গুরু কে বানা’ গান এবং তার পর লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়ে ‘পাপী হো গয়ে ন্যায়না তেরে’ গান গেয়ে শোনান।

বিকেল সাড়ে চারটেয় সেখান থেকে রওনা হয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে অমৃতবাস গ্রামের রুঁদশাহপুরে পৌঁছায়। চারদিকে আরাবল্লী পাহাড়ে ঘেরা এই গোটা গ্রামে তফশিলী জাতির জাটবদের বাস। এমনিতে গোটা আলোয়ার জেলাই আরাবল্লীর পর্বতমালার মধ্যে অবস্থিত। এখানে দর্শকদের মধ্যে শিশু, যুবক, প্রৌঢ় আর বৃদ্ধেরাও ছিলেন। ভারত পরিবারের বীরেন্দ্র ক্রান্তিকারী ‘ঢাই আখর প্রেম’ পদযাত্রা সম্পর্কে স্বল্প বক্তব্য বলেন। যোধপুরের পিপাড় শহর থেকে আসা লিটল ইপ্টার বাচ্চারা প্রবীণ শর্মা ও রবীন্দ্র কুমারের নির্দেশনায় ‘সদ্ভাবনা’ নাটক অভিনয় করেন। এখানেই ছত্তিশগড়ের ‘নাচা-গম্মত’ থিয়েটার গ্রুপের নিসার আলীর নির্দেশনায় দেবনারায়ণ সাহু, গঙ্গারাম সাহু, জগনুরাম রসসমৃদ্ধ নাটিকা ও গানে সদ্ভাবনা ও সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা দেন। গ্রামের মেয়েরা দুটি রাজস্থানী লোকনৃত্য পরিবেশন করেন।

গ্রাম অমৃতবাসে একটি ঘটনা ঘটে যায়। দর্শকদের মধ্যে একজন বাবাজী বসে ছিলেন। তিনি প্রসন্নর কাছে তার জাতি কি জানতে চান। প্রসন্ন তার সঙ্গে কথা বলতে থাকলে তিনি কুতর্কে লিপ্ত হন। কোনও কথাই শুনতে চাইছিলেন না। কোনও কথা শুনতে নারাজ বলে প্রসন্ন সেখানেই অনশনে বসে যান। দুপুরের খাওয়া বন্ধ রাখেন। তখন সব গ্রামবাসীই পদযাত্রীদের বোঝান যে, প্রত্যেক গ্রামেই এমন কিছু মানুষ থাকেন। যাত্রীরা যেন তাঁকে গুরুত্ব না দিয়ে খাবার খান। সকলের জন্য পুরী, সবজি আর ক্ষির পরিবেশন করে গ্রামবাসীরা ভোজন করান।

তৃতীয় দিন পদযাত্রায় ইপ্টার সাথীদের ছাড়াও ভারত পরিবারের জেলা সভাপতি জস্যু ফৌজি আর জয়নাব সিদ্দিকি, লখনউ থেকে ফতিমা শেখ আর পাটনা থেকে সুমন সৌরভ যোগ দেন। রাজস্থান থেকে কিষণ খেরলিয়া, হর্ষিতা বিকাশ কাপুর, প্রবীণ শর্মা, সফি মোহম্মদ ও অন্যান্য সাথীরা উপস্থিত ছিলেন।

০১ অক্টোবর ২০২৩ : রবিবার

সকাল ছ’টায় পদযাত্রীরা রুঁদশাহপুরের কাছে অবস্থিত পাহাড়ে চুহড়সিদ্ধ মাজার-মন্দিরে পৌঁছায়। চুহড়সিদ্ধ ছিলেন ছাগল চরানো মুসলিম মেও জাতির এক বাবা, যাকে সব সম্প্রদায়ের লোকেরাই শ্রদ্ধা করতেন। তিনি সব মেহনতি মানুষদের মধ্যে প্রেম আর সদ্ভাবের বার্তা ছড়াতেন। প্রত্যেক ধর্মের লোকেরাই তার অনুগামী ছিলেন। মাজারের ভিতরে নজীর আকবরাবাদীর কবিতা ‘রোটিয়াঁ’ আবৃতি করে শোনান ছত্তিশগড়ের সাথী নিসার আলী।

গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করার সময় ইপ্টার জাতীয় সভাপতি প্রসন্ন বলেন, আমাদের খাদি আর স্বাবলম্বনের প্রতি ভালবাসাকে বুঝতে হবে। প্রেম আর সৌভ্রাতৃত্ব মেনে চলার জন্য কবীর, রুইদাস, মীরার ভাবনাকে আত্মস্থ করার পরামর্শ দেন।

প্রাতঃরাশের পর পাহাড়ের নিচে এসে ক্ষেত আর পাকদণ্ডী বেয়ে হেঁটে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর মঙ্গলদাস গ্রাম হয়ে হাজিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে পৌঁছায়। সেখানে একটি সরকারি স্কুলে খাওয়া ও বিশ্রামের পর গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা হয়েছিল। গ্রামপ্রধান তারাচান্দ, ভূমিরাম গুর্জর, জেলা পরিষদ সদস্য ওমপ্রকাশ, সমাজকর্মী অনুপ দায়মা ও শিক্ষক শিবরাম রাজস্থানী পরম্পরা অনুসরণ করে সব যাত্রীদের সাফা পরিয়ে সম্মান জানান।

গ্রামপ্রধান তারাচান্দ, জেলা পরিষদ সদস্য ওমপ্রকাশ, সমাজকর্মী অনুপ দায়মা ও আশেপাশে যে সব ঘটনা ঘটছে, তার বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকারের জন্য গ্রামবাসীদের নিয়ে হবে জোট বেঁধে রুখে দাঁড়ানোর কথা বলেন। তা থেকে জানা যায়, কীভাবে গ্রামপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে হাজিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষ পাহাড়ে ছাগল ও গবাদী পশু চড়ানোর উপর বন বিভাগের লাগানো বেড়ার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন করেছিলেন।

দুপুরে ডডিঘরে যাত্রীদের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন গ্রামপ্রধান। ‘ঢাই আখর প্রেম’-এর পদযাত্রীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা হয়। অনেকের অভিজ্ঞতার ভিডিও রেকর্ড করা হয়। এতে পিপাড় থেকে আসা শিশু সনু, সুখদেব, জয়কিষণ, সুমিত, রুদ্র, ললিত, রামকিষাণ আর রাজবীর ছাড়াও আলোয়ার থেকে আসা শিশু গুঞ্জন ওরফে বুঁদ আর সংকল্প বিশেষ ভাবে যোগ দেন। অন্য পদযাত্রীরাও নিজের নিজের অভিজ্ঞতা বলেন।

এরই মধ্যে বালা দেহরায় বানজারা বস্তিতে অনেক বানজারা মহিলার সঙ্গে কথাবার্তা হয়। সর্বেশ জৈন ও অর্পিতাকে দেওরনি-ভাসুরনি লাড়ো আর জাই বলেন, তারা সড়ক আর জলের দাবি করেছিলেন। যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন। সেখানেই প্রসন্নর সঙ্গে কথা বলার সময় প্রায় বানজারা জনজাতির ৯২ বছর বয়সী আস মহম্মদ (বয়স আনুমানিক, কারণ তিনি জানিয়েছেন, স্বাধীনতার সময় তার ১৫-১৬ বছর বয়স ছিল) জানান যে, যাযাবর বানজারা জনজাতির এটাই পুনর্বাসন কেন্দ্র। তারা ভেড়ার পাল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, এখানে এসে বসত গড়েছেন। তাদের মহিলারা যে গয়নাগুলি পরেছিলেন, সেগুলি অনন্য। এগুলি অ্যালুমিনিয়ামের, মহিলারা নিজেরাই বানিয়েছেন।

বিকেল পাঁচটায় পদযাত্রা নির্বাণ ওয়ান ফাউন্ডেশন পৌঁছায়, যেখানে বোধিসত্ব নির্বাণ জি যাত্রীদের স্বাগত জানান। এই ফাউন্ডেশন নট আর কঞ্জর সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষাবিস্তারে কাজ করে। নিজেদের প্রাঙ্গনে বিকল্প স্কুল চালায়, যেখানে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। বোধিসত্ব জির বিশ্বাস, ‘ঢাই আখর প্রেম’ পদযাত্রা দেশে পারস্পরিক সৌহার্দ্য এবং মানুষে মানুষে ভালবাসার ভাবনা বাড়াতে সক্ষম হবে। এটি প্রসংসার যোগ্য উদ্যোগ। তিনি বলেন, গৌতম বুদ্ধ আর কবীরদাস এমনই বিপ্লবী সন্ত ছিলেন, যারা সমাজকে পশ্চাদপদতা থেকে বাইরে এনে অহিংসা, ভালবাসা আর সৌহার্দ্যের বার্তা দিয়েছেন। যুবকদের উচিত তাদের ভাবনাকে নিজেদের জীবনে অনুসরণ করা। ছত্তিশগড়ের সাথী নিসার আলী এই যাত্রায় আসা বাচ্চাদের ‘লে মশাল চল অড়ে হ্যায় লোগ মেরে গাও কে’ ও আরও কিছু গান শিখিয়ে দেন।

সন্ধ্যা ছটা থেকে সাংস্কৃতিক কর্মসুচি শুরু হয়। নিসার আলী, গঙ্গারাম, জগনুরাম আর দেবনারায়ণ সাহু প্রহসন নাটিকা ‘গামছা বিক্রেতা’ পরিবেশন করেন। মধুবনী থেকে আসা সুমন সৌরভ স্বরচিত একক নাটক ‘কিষাণ কি ব্যথা’ পরিবেশন করেন। উত্তরাখণ্ড থেকে আসা অনিতা পন্থ লোকনৃত্য আর গীত সাগরের গান পরিবেশন করেন। ভারত পরিবারের সঙ্গে যুক্ত এই তিন সাথীই ‘ঢাই আখর প্রেম’ পদযাত্রায় যোগ দিয়েছেন। পিপাড়ের লিটল ইপ্টার বাচ্চারা ‘সদ্ভাবনা’ নাটক অভিনয় করেন। এই দিনের শেষ অনুষ্ঠান ছিল তিলকরাম ও তার সাথীদের দ্বারা কবীরের গান।

চতুর্থ দিন রাজস্থানে যাত্রার সংযোজক সর্বেশ জৈন, ইপ্টার জাতীয় সভাপতি প্রসন্ন, যুগ্ম সম্পাদক অর্পিতা, রাজস্থানের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় বিদ্রোহী, আলোয়ারের ইপ্টার সভাপতি মহেন্দ্র সিং, ভারত পরিবারের সভাপতি বীরেন্দ্র ক্রান্তিকারী, লখনউয়ের জয়নাব সিদ্দিকি, উত্তরাখণ্ডের অনিতা পন্থ, বিহারের সুমন সৌরভ, ছত্তিশগড়ের নাচা-গম্মত অভিনেতা নিসার আলী, দেবনারায়ণ সাহু, গঙ্গারাম সাহু, জগনুরাম, এডবা রাজস্থানের সহ সভাপতি রাইসা, এডবা আলোয়ারের কোষাধ্যক্ষ মঞ্জু মীণা, জনবাদী লেখক সঙ্ঘের আলোয়ারের সম্পাদক ভরত মীণা, সরিতা সাগর, সুশীলা রাণি, রাহুল জস্যু ফৌজি, কিষণলাল খেরালিয়া ছাড়াও পিপাড় লিটল ইপ্টার বাচ্চারা সনু, সুখদেব, সুমিত, জয়কিষাণ, রুদ্র, ললিত, যুবরাজ, রামকিষণ আর রাজবীর এবং আলোয়ার থেকে আসা শিশু গুঞ্জন, বুন্দ আর সংকল্প যোগ দিয়েছিলেন।

 
০২ অক্টোবর, ২০২৩ : সোমবার

পঞ্চম তথা শেষ দিন সকাল ৭টায় যাত্রা শুরু হল নির্বাণ ওয়ান ফাউন্ডেশন থেকে। সেখান থেকে পদযাত্রীরা তিন কিলোমিটার দূরত্ব পার করে প্রথম পর্বে রুদ্ধমাচ গ্রামের মৎস্য মেওয়াত, শিক্ষা ও বিকাশ সংস্থানে এলেন। এটি গান্ধীবাদী সাথী বীরেন্দ্র বিদ্রোহী আর বেদ দিদির কর্মস্থল ছিল। তারা আলোয়ারের নাগরিকদের সমস্যা ও অধিকারের জন্য সক্রিয় ছিলেন। এটি গণবিকাশ ও গণসংবাদ কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হয়েছে। এখন সেই দুজনই আর নেই, কিন্তু তাদের কাজ অনুপ দায়মা, বীরেন্দ্র ক্রান্তিকারী আর অন্য সাথীরা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।

মৎস্য মেওয়াত, শিক্ষা ও বিকাশ সংস্থানে গান্ধী জয়ন্তী আর বায়কম সত্যাগ্রহের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে গান্ধীজির স্মরণে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। প্রসন্ন বলেন, গান্ধীজি শুধু রাজনৈতিক কাজই করতেন না, তিনি সৃজনমূলক কাজ করতেন। এই সম্পর্ক খুব গুরুত্বপুর্ণ। অনুপ কুমার দায়মা নিজের কথা বলেন। পারস্পরিক আলোচনা আর প্রাতঃরাশের পর পরবর্তী গন্তব্যের দিকে যাত্রীরা রওনা হন।

এর পর পদযাত্রা রুদ্ধমাচ গ্রাম থেকে বেরিয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরের গ্রাম রাবণ দেবড়া পৌঁছায়। এখানে জৈন মন্দিরের ভগ্নাবশেষ আছে, যেখান থেকে আলোয়ারের বীরবল মোহল্লায় রাবণ দেবড়া মন্দির দেখা যায়। এখানে একটি বড় বটগাছের নিচে বানানো চাতালে রামচরণ রাগ ‘ঢাই আখর প্রেম’ এর উপর রচিত গান পরিবেশন করেন। কবিতা পাঠ করেন প্রদীপ মাথুর। রুদ্ধ শাহপুর গ্রামের বহুরূপী রাকেশ নিজের শিল্পের প্রদর্শনে সকলের মন জয় করেন। যেদিন আমরা গেছি, সেদিন তিনি হনুমানের রূপ ধারণ করেছিলেন। এখানে রামচরণ রাগ গজল আর গান শোনান। তিনি সৃজক সংস্থার সচিব, যেটি ‘ঢাই আখর প্রেম’ পদযাত্রার সহযোগী সংস্থা। প্রবীন সাথী প্রদীপ মাথুর, প্রদেশ ইপ্টার সচিব এবং আলোয়ারের সাহিত্য ও ললিত কলারও সচিব। পিপাড় থেকে আসা প্রবীণ পরিমলও গজল গেয়ে শোনান।

এর পর এখান থেকে যাত্রা প্রতাপবাঁধ এবং ঘোড়াফের চৌরাস্তা হয়ে জ্যোতিবা ফুলে সার্কলে পৌঁছালে সেখানে জ্যোতিবা ফুলের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হয়। এখান থেকে মনু মার্গ ধরে মন্নী কা বড় হয়ে সৈনিক বিশ্রাম গৃহের সামনে কোম্পানি বাগে পৌঁছায়। সেখানে বিজন সংস্থানের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিজন সংস্থানের হিমাংশু এবং চিন্টু গুজর সবাইকে খাবার পরিবেশন করেন। ছত্তিশগড়ের টিম এখানে নাটক পরিবেশন করে। পিপাড় (যোধপুর) এর টিম ‘সদ্ভাবনা’ নাটক অভিনয় করে। পদযাত্রায় যোগ দেওয়া সব সাথীদের ইপ্টার কার্যনির্বাহী সভাপতি নগেন্দ্র জৈন, রাজস্থানে পদযাত্রার সংযোজক ডা. সর্বেশ জৈন, বীরেন্দ্র ক্রান্তিকারী, ভরতলাল মীণা, নীলম পণ্ডিত, ছঙ্গারাম মীণা, হরিশঙ্কর গোয়েল, অধ্যাপক শম্ভু গুপ্ত, সবাইকে গামছা দিয়ে স্বাগত জানান। ‘ঢাই আখর প্রেম’ সাংস্কৃতিক পদযাত্রার শেষ পর্বে নগর নিগম পৌঁছে মহাত্মা গান্ধীর মাল্যদান করে রাজস্থানে পদযাত্রার সমাপ্তি ঘোষিত হয়।

রাজস্থানে পদযাত্রার আয়োজক ও সংযোজক সংগঠন ছিল – রাজস্থান ইপ্টা, এডবা, জলেস, সৃজক সংস্থান, লাইফ সেভার টিম, বিজন সংস্থান, এটক, সদ্ভাব মঞ্চ, সিটু, এসএফআই, এমএমএসবিএস।

View: Rajasthan Jatha Photo Gallery

(এই রিপোর্ট অর্পিতা শ্রীবাস্তব, সর্বেশ জৈন, সঞ্জয় বিদ্রোহী ও জীবন সিং মানবীর রিপোর্টের সঙ্কলন) 
সংকলন: উষা আহলে । অনুবাদ: চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্যী

Spread the love
%d bloggers like this: