Categories
Report

শান্তি, প্রেম, ঐক্য ও সম্প্রীতির মর্মে ভেজা জম্মুতে ‘ঢাই আখর প্রেম’-এর যাত্রা

हिन्दी | English | বাংলা | മലയാളം | ಕನ್ನಡ

|| জম্মুতে ঢাই আখর প্রেম জত্থা – 15-16 নভেম্বর 2023 ||

15 নভেম্বর, 2023-এ, ‘ঢাই আখর প্রেম: রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক জত্থার’-এর প্রথম দিনে, জম্মুতে প্রেম, শান্তি এবং সম্প্রীতির বার্তার প্রচারকে গুরুত্ব দিয়ে এক প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা হয়েছিল। আইপিটিএর রাষ্ট্রীয় সভাপতি প্রসন্নার নেতৃত্বে, জত্থাটি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উদযাপন করেছে এবং অনেক শিল্পী, কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং উৎসাহীদের একত্রিত করেছে।

পঞ্জভক্ত মহাদেব মন্দির থেকে পীর মিঠা সাহেব দরগাহ পর্যন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিনটি শুরু হয়। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক এবং ভালোবাসায় বোনা প্রতীকী এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহরজুড়ে পরিভ্রমণ করে।

পঞ্জভক্ত মহাদেব মন্দির, যা ‘রূপা ওয়ালা মন্দির’ নামেও পরিচিত, এটি জম্মু শহরের অন্যতম প্রাচীন মন্দির। এটি একটি অনন্য এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাক্ষী। মন্দিরের সুরেশ শর্মা গোষ্ঠীর সদস্যদের সাথে এখানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে  তথ্যগুলিকে ভাগ করে নেন। এটি উল্লেখযোগ্য যে এর মেঝেতে ব্রিটিশ আমলের মুদ্রা রয়েছে। এই মন্দির ইতিহাস ও সংস্কৃতির মিশ্রণকে প্রতিফলিত  করে৷ একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে, এটি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অনুষ্ঠান যেমন সাওয়ান মহোৎসব, শারদ মহোৎসব এবং এর অ্যাম্ফিথিয়েটারে নৃত্যের অনুষ্ঠানগুলির আয়োজন করে।জম্মুর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, এই প্রতিষ্ঠিত স্থানটি শহরের কেন্দ্রস্থলে বিরল প্রাচীনত্ব,আধ্যাত্মিক তাৎপর্য্য এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির একটি উৎকৃষ্ট মিশ্রনের নিদর্শন।

জিয়ারত পীর মিঠা সম্প্রীতির চিরন্তন প্রতীক, শতাব্দী ধরে সকল ধর্মের মানুষকে স্বাগত জানায়। ঢাই আখর প্রেম জত্থা জম্মুর এই মন্দিরের একতার নীতির প্রতিধ্বনি মাত্র। জত্থার এই সাংস্কৃতিক যাত্রা জিয়ারাতের চেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যা ভালবাসা, শান্তি এবং সহাবস্থানের প্রচার করে।

মার্চমাসের দ্বিতীয় পর্বের পদযাত্রা বিকেলে মহারাজা হরি সিং পার্ক থেকে শুরু হয়ে জুয়েল চক হয়ে অভিনব থিয়েটারে পৌঁছায়। জত্থার ভাবনার সাথে একাত্ম হয়ে  দর্শকরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ শোভাযাত্রা দেখেন।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক জত্থা অভিনব থিয়েটার কমপ্লেক্সে অবস্থিত কে.এল. সেহগাল হলে পৌঁছে গেল । জম্মুর স্বাধীনতা সংগ্রামী কমরেড ধন্বন্তরির জীবন ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় পুরো হলের পরিবেশ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

কমরেড ধন্বন্তরীকে ভগৎ সিংয়ের আদর্শ ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। ডোগরি সোসাইটির (জম্মু) সভাপতি ডঃ ললিত মাগোত্রা কমরেড ধন্বন্তীর উপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আইপিটিএর রাষ্ট্রীয় সভাপতি,প্রসন্না এবং রাষ্ট্রীয় সাধারণ সম্পাদক, তানভীর আখতার দর্শকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন এবং একটি অর্থপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর সেশনের আকারে দ্বিমুখী সংলাপ স্থাপন করেন। শ্রীমতি সীমা অনিল সেহগাল একটি প্রাণময় গান পরিবেশন করেন, যা সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে দেয়। পাটনা আইপিটিএ-এর প্রতিভাবান শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়, যা দর্শকদের দ্বারা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছিল। আইপিটিএর অনেক শিল্পী ঢাই আখর প্রেম যাত্রায় যোগ দিতে সুদূর পাটনা থেকে জম্মু পৌঁছেছেন। তাদের আবেগ এবং প্রতিশ্রুতিকে স্যালুট।

16 নভেম্বর, 2023-এ, রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক জত্থা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সাহসী সৈনিক কমরেড ধন্বন্তীর উত্তরাধিকার এবং অনুপ্রেরণাকে সম্মান জানায় এবং মাল্যার্পণ করে। ত্রিকুটা নগরের ধন্বন্তরী পার্কে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানটি ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারন এতে জত্থার সঙ্গীরা এবং উৎসাহী লোকজন অংশগ্রহণ করেন। এটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মিলিত শ্রদ্ধা জানানোর প্রতীক।

বাহু প্লাজা কমপ্লেক্স এবং পদ্মশ্রী পদ্মা সচদেব মহিলা কলেজ, গান্ধী নগরে পাটনা আইপিটিএ একটি আকর্ষণীয় পথনাটিকা পরিবেশন করে, যেখানে প্রায় 400 জন ছাএরা নাটকটি দেখেছিল। এই চিন্তা-উদ্দীপক উপস্থাপনা দর্শকদের বিমোহিত করেছিল। সেখানে উপস্থিত সকলেই ভালোবাসা, ঐক্য ও সামাজিক চেতনার বার্তায় অনুরণিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার প্রশংসা করেন।

ভারতীয় থিয়েটারের দিগগজ প্রসন্নার দ্বারা পরিচালিত একটি বিশেষ অভিনয় কর্মশালার মাধ্যমে এই সাংস্কৃতিক সফরের পরিসমাপ্তি হয়।একজন পরিচালক, অভিনেতা এবং নাট্যকার হিসাবে,পারফর্মিং আর্টের জগতে প্রসন্না একটি অমিট ছাপ রেখে গেলেন। বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে অন্তর্দৃষ্টি এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য 30 টিরও বেশি স্থানীয় শিল্পী এবং উৎসাহী ‘রঙ্গযুগে’ জড়ো হয়েছিল।অংশগ্রহণকারীদের থিয়েটারের সূক্ষ্মতা বোঝার, তাদের নৈপুণ্যকে আরও উন্নত করার এবং তাদের শৈল্পিক সংবেদনশীলতাকে সমৃদ্ধ করার একটি অনন্য সুযোগ করে দিল প্রসন্নার নির্দেশিকা ।’রঙ্গযুগে’ এর পরিচালক, দীপক কুমার প্রসন্নাকে তাঁর উপস্থিতি এবং তাঁর জ্ঞানের সম্পদ জম্মুর শিল্প সম্প্রদায়ের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানালেন।

দুই দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে সৃজনশীলতা, আবেগ এবং সম্মিলিত চেতনার বন্যা দেখা গেছে। এই সাংস্কৃতিক যাত্রাকে সফল করতে শিল্পী সম্প্রদায়, সাহিত্যিক, সামাজিক সংগঠন এবং বিভিন্ন ব্যক্তি একত্রিত হয়েছিলেন। তাদের অংশগ্রহণ দলটিকে দৃষ্টিভঙ্গির একটি ক্যালিডোস্কোপের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, যার ফলে জম্মুর সাংস্কৃতিক চিত্র সমৃদ্ধ হয় । সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, মানুষে মানুষে কথোপকথন এবং শৈল্পিক সহযোগিতায় ভরা এই সফর জম্মুর সাংস্কৃতিক ভূখণ্ডে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছে। যখন এটি এগিয়ে চলেছে, তখন ‘ঢাই আখর প্রেম’-এর চেতনাকে মূর্ত করে এই দলটি জনে-জনে মানুষের কাছে ভালবাসা, শান্তি এবং সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে থাকে।

রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক জত্থা জম্মু চ্যাপ্টারের একজন সংগঠক বলেছেন যে রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক জাথা তার ব্যাপক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সাধারণ বোঝাপড়া, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সংহতির বীজ বপন করেছে। তিনি সকল অংশগ্রহণকারী ও সমর্থকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

যাত্রা শেষ হতে পারে, তবে শৈল্পিক অভিব্যক্তি এবং সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতিধ্বনি দীর্ঘকাল প্রতিধ্বনিত হবে। জম্মুতে ন্যাশনাল কালচারাল ট্রুপের প্রবেশ শুধু একটি সাংস্কৃতিক উদ্যোগই নয়, ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রচারে শিল্পের শক্তির প্রমাণও। আগামী প্রজন্মের জন্য ভালোবাসা, শান্তি এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের তানা – বানার উত্তরাধিকার রেখে এই যাত্রা অব্যাহত রয়েছে।

অনুবাদ – মিত্রা সেন মজুমদার

Spread the love
%d bloggers like this: