हिन्दी | English | বাংলা | ಕನ್ನಡ | മലയാളം
ঢাই আখর প্রেম পদযাত্রা পাঞ্জাবে ২৭ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হল।যাত্রায় নানা জায়গায় জনসাধারণের সঙ্গে আলোচনা হল। অনেক লোকনৃত্য, নৃত্যনাটক, গণসঙ্গীত আর নাটক পরিবেশিত হয়েছে। একটি সেমিনার ও একটি নাট্য বিষয়ক আলোচনার পর পাঞ্জাবের বিখ্যাত গদরি বাবেয়াঁ দা মেলার শেষ দিনে মেলার মঞ্চে এর সমাপ্তি হয়।
২৭ অক্টোবর, ২০২৩ শুক্রবার
পাঞ্জাবে ঢাই আখর প্রেম সাংস্কৃতিক পদযাত্রার আজ প্রথম দিন। যাত্রার শুরু হচ্ছে ভগত সিং এর পৈতৃক গ্রামের খটকড়কলা স্মারক থেকে। ইপ্টার সর্বভারতীয় সভাপতি প্রসন্ন, কার্যনির্বাহী সভাপতি রাকেশ বেদা, পাঞ্জাব ইপ্টার সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিত রূপোয়ালি, দীপক নাহারের সঙ্গে খটকড়কলা স্মারক শ্রদ্ধা জানান। নিকটস্থ গুরুদোয়ারায় চা নাস্তা খেয়ে প্রসন্ন অসংগঠিত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা নেপাল থেকে এখানে এসে দিনমজুরি করছেন।
ভগত সিং এর স্মৃতি স্মারকে মাল্যদানের পর প্রসন্ন এবং রাকেশ বেদা তাঁর স্বপ্ন আর তার বিচারধারা প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্যে ভগত সিং-এর সেই উক্তির উপর জোর দেন যে, ‘বিপ্লবের তলোয়ার বিচারধারায় শানিত হয়ে তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে’। এই ভাবনা প্রেম, সদ্ভাবনা আর একতার এবং এটাই আমাদের ‘ঢাই আখর প্রেম পদযাত্রার’ উদ্দেশ্য। ভগত সিং এর স্বপ্নের ভারত! শহিদদের স্বপ্নের ভারত!!
শহিদ-এ-আজম ভগত সিং আদর্শ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ‘ঢাই আখর প্রেম’ পদযাত্রায় সঙ্গী হন। রাকেশ বেদার স্লোগানে গলা উৎসাহের সঙ্গে মিলিয়ে তারা দু কিলোমিটারের মতো পথ হেঁটে ভগত সিং-এর পূর্বজদের বাড়িতে যান। সেখান থেকে কয়েক পা দূরে একটি গুরুদোয়ারা প্রাঙ্গনে আজাদ রঙ্গমঞ্চের শিল্পী ও নাট্যকর্মীরা ভগত সিং এর জেল জীবনের উপর একটি গীতিময় নাটক পরিবেশন করেন। এর পর দেশে বর্তমান সময়ের সাম্প্রদায়িক ও ধর্মের নামে ঘৃণার বিষয়ে রচিত একটি পথ নাটক পরিবেশিত হয়, যার মাধ্যমে বলা হয় যে, হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান সবাই নিজেদের মধ্যে একতাবদ্ধ। ধর্মীয় ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িকতা দেশের হিতসাধন করে না।
‘দোয়াবা’ বলে পরিচিত এই গোটা এলাকায় রয়েছে বড় বড় পাকা বাড়ি, যেখানকার অধিকাংশ মানুষ কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় উপার্জন করছেন আর এখানকার এখানকার চাষের মাঠে বিহার, উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যের মানুষ দিনমজুরি করছেন। যাত্রার সাথীরা যখন কৃষিমজুরদের মাঠে খড় জড়ো করতে দেখে নিজেদের থামাতে পারেনি। প্রচণ্ড রোদেও তারা নিজেরা হাত লাগিয়ে তাদের কাজ কিছুটা সহজ করে দেন। এমন করার কারণ, ‘শ্রমদান’ এই যাত্রার অন্যতম ও অভিন্ন অংশ।
শ্রমদানের সময় প্রসন্ন এবং রাকেশ যখন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে, কাজের ধরণের উপর নির্ভর করে এই শ্রমিকরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দৈনিক মজুরি পান। প্রতিদিন তাদের কাজ থাকে না। নিজের ঘরবাড়ি থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে তপ্ত রোদে সারা দিন কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। তাদের এই মেহনতে দেশের সব মানুষের খাবার জোটে, কিন্তু দেশ তাদের একটা সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারে না।
শ্রমজীবীর সঙ্গে একতার এই কাজের পরে পদযাত্রীরা গুরুদাস গুরুদোয়ারায় পৌঁছান। সেখানে সকলের সঙ্গে একসঙ্গে বসে খুব আনন্দ করে গুরুদোয়ারা পরিবেশিত লঙ্গরে ‘গুরুর প্রসাদ ডাল রুটি’ খান। এর পর পদযাত্রা রওনা হয় গুণাচৌরের দিকে। সেখানে প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের সর্বভারতীয় সম্পাদক বিনীত তিওয়ারি তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রেমই একমাত্র উপায় যার দ্বারা বিদ্বেষ ও ঈর্ষাকে জয় করা যায়। গান্ধীজির বার্তা ছিল প্রেম, কবীরের ঐতিহ্য প্রেম। নানক থেকে গুরু গোবিন্দের বার্তাও প্রেম।
প্রথম দিনের যাত্রা শেষ হওয়ার পর প্রসন্ন যুবক শিল্পী ও নাট্যকর্মীদের সঙ্গে গণনাট্য নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন যে, আমাদের নাটক ও অভিনেতাদের ভূমিকা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। প্রথমে অভিনয় জানতে হবে, তার পর তার মুখের ডায়লগ। সঠিক অ্যাকশন জরুরি। যিনি যে ভূমিকায় অভিনয় করছেন, তাঁকে সেই চরিত্রের মতো অভিনয়টা আগে শিখতে হবে, তারপর ডায়লগ।
জাঠায় ইপ্টার সর্বভারতীয় সভাপতি প্রসন্ন, কার্যকরী সভাপতি রাকেশ বেদা, প্রলেস এর জাতীয় সম্পাদক বিনীত তিওয়ারি এবং অসুস্থ শরীর নিয়েও পাঞ্জাব ইপ্টার সভাপতি সঞ্জীবন সিং যোগ দিয়েছেন। এদের সঙ্গে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিত রূপোবালি, কোষাধ্যক্ষ দীপক নাহার,, চণ্ডীগড় ইপ্টার সভাপতি ড. বলকার সিং সিদ্ধু, মহাসচিব কে এন এস শেখোঁ, প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের পাঞ্জাব রাজ্য শাখার সভাপতি তথা আন্তর্জাতিক স্তরে প্রখ্যাত পাঞ্জাবী কবি সুরজিত জজ, সঙ্ঘের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কুলদীপ সিং দীপ – যিনি ইপ্টা নিয়ে পিএইচডি করেছেন, মঞ্চ অভিনেতা দেবিন্দর দমন, চলচ্চিত্রাভিনেতা যশবন্ত দমন, আমন ভোগল, ড. হরভজন সিং, পরমিন্দর সিং মদালি, সত্যপ্রকাশ, রঞ্জিত গমনু, বিবা কুলবন্ত, রোশন সিং, রমেশ কুমার, কপন বীর সিং, বিবেক-সহ মঞ্চ ও চলচ্চিত্র জগতের অভিনেতারা।
২৮ অক্টোবর, ২০২৩ শনিবার
পাঞ্জাবে ঢাই আখর পদযাত্রার সর্বভারতীয় সাংস্কৃতিক পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে ‘পাঞ্জাব দা পরাঠা’-র আনন্দ লাভের পর জাঠার যাত্রীরা বেলা দশটায় বল্লোয়াড় পৌঁছায়। ‘ঢাই আখর প্রেম’ যাত্রার প্রথম পর্বের ‘ঢাই আখর প্রেম পড়নে আউর পড়ানে আয়ে হ্যায়’ গানের মধুর সুর স্মৃতিতে গুঞ্জরণ তুলছিল। পাঞ্জাবে এখন ধান কাটা হচ্ছে। কাটার পর যেটুকু সময় পায়, সেই সময় ঝুমুর গানের সঙ্গে নাচেন তারা। এটি পুরুষদের আনন্দ প্রকাশের গান। বল্লোয়াড়ে এর উপস্থাপনা করলেন আজাদ কলা মঞ্চের সাথীরা।
জাঠার উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে রচিত ‘ঢাই আখর প্রেম’ নাটক ছত্তিশগড় থেকে আসা পদযাত্রী নিসার আলী, দেবনারায়ণ সাহু, গঙ্গারাম বাঘেল আর জুগনু রাম জনতার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই উপস্থাপন করলেন। এভাবে জাঠার পদযাত্রীরা ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন। হাওয়ায় আন্দোলিত মাঠভরা আখ, ধান কাটার দৃশ্যে ত্বক ঝলসে দেওয়া রোদের অনুভবই হল না। জাঠা পৌঁছাল বল্লোয়াড় গুরুদোয়ারা। সেখানে সব যাত্রীরাই বড় আনন্দে গুরুর প্রসাদ ডাল রুটি খেয়ে ওজলার উদ্দেশে পা বাড়ালেন। সেখানে দেশে চলমান সাম্প্রদায়িক আর ধর্মের নামে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিষয়ে একটি পথনাটিকা অভিনয় করল আজাদ কলা মঞ্চ।
নাটকে বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মের নামে ঝগড়ায় কোনও দেশের কখনও কোনও উপকার হয়নি। আমরা একেকজন যে ধর্মেই বিশ্বাস করি না কেন, আমরা সবাই ভাইবোনের মতো। ওজলায় ঢোকার মুখে বিরাট এক বটগাছের নিচে বিপুল সংখ্যক মহিলা, তরুণ তরুণী, শিশুরা অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে সারা ভারত প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের সর্বভারতীয় সম্পাদক বিনীত তেওয়ারি সাহির লুধিয়ানভির কবিতা শোনান। মানুষের সঙ্গে কথায় কথায় কখন বেলা তিনটে বেজে গেছে, কেউ খেয়ালই করেননি।
রঙ অউর নস্ল জাত অউর মঝহব জো ভি আদমি সে কমতর হ্যায়,
ইস হকিকত কো তুম ভি মেরি তরহ মান জাও তো বাত বনে।
নফরত কে জাহান মে হম পেয়ার কে বস্তিয়াঁ বসাতে হ্যায়,
দূর রহনা কোই কামাল নেহি পাস আও তো কই বাত বনে
এর পর আজাদ কলা মঞ্চের সাথীরা দেশজোড়া সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও ধর্মীয় বিদ্বেষের উপর রচিত পথনাটিকা অভিনয় করেন, যার মূল বার্তা হল, ধর্মের নামে ঝগড়া ও সাম্প্রদায়িকতা কখনও কোনও দেশের ভাল করেনি। স্থানীয় মোগা জেলায় লোহারের কাজ করেন এমন সাথীরা অনেক বিপ্লবী এবং একতার বার্তাবাহী গানের রচয়িতা মহেন্দ্র সিং সাথীর জীবনের কাহিনি নিয়ে লেখা ‘মশাল লেকর চলনা যব তক রাত বাকি হ্যায়’ গানটি মূল গুরমুখী ভাষায় গেয়ে শোনান।
জাঠা তার পরের গন্তব্য ফাগোয়াড়ার দিকে এগোল। রাস্তায় সহরাল মুড়িয়া চৌরাস্তায় পদযাত্রীরা কিছু সময় জনসংযোগ করে এবং নিসার আলী ও সাথীরা কর্পোরেট লুটের পর্দাফাঁস করার একটি গান ‘দমাদম মস্ত কলন্দর’ গেয়ে শোনান।
কাপুরথালা জেলায় ফাগোয়াড়া শহরে আজাদ কলা মঞ্চের নিজস্ব ভবন আছে, যেখানে পথনাটক ও থিয়েটারের প্রশিক্ষণ, মহলা ও প্রস্তুতির কাজ হয়। শহরের সড়ক ধরে হেঁটে পদযাত্রা এই ভবনে আসে। এখানে নিসার আলী আর তার সাথীরা ‘যব তক রোটিকে প্রশ্নোঁ পর রখা রহেগা ভারি পত্থর/ কোই মত খোয়াব সাজানা তুম’ গণসঙ্গীত গেয়ে শোনান। আজাদ কলা মঞ্চ ‘উস্তাদ-জুমরে’ নাটক অভিনয় করে। ভগত সিং এর জীবননির্ভর ‘ম্যায় ফির আবাঙ্গা’ নাটক অভিনীত হয়। এই ভাবে দ্বিতীয় দিনের যাত্রা শেষ হয়।
নাটক অভিনয়ের পর প্রসিদ্ধ নাট্য নির্দেশক তথা ইপ্টার সর্বভারতীয় সভাপতি প্রসন্ন স্থানীয় অভিনেতাদের প্রশংসা করে তাদের যথাসম্ভব সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হওয়া ‘রেভোলিউশনারি থিয়েটার’-এর বিষয়ে বলেন।
পাঞ্জাবের জাঠায় প্রসন্ন (সর্বভারতীয় সভাপতি, ইপ্টা), সঞ্জীবন সিং (সভাপতি, পাঞ্জাব ইপ্টা) ইন্দ্রজিত রূপোয়ালি (সাধারণ সম্পাদক, পাঞ্জাব ইপ্টা) কে এন এস শেখোঁ (সাধারণ সম্পাদক, চণ্ডীগড় ইপ্টা), বিনীত তেওয়ারি (সর্বভারতীয় সম্পাদক, প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘ), ছত্তিশগড় ইপ্টা-র নিসার আলী, গঙ্গারাম বাঘেল, জগনু রাম, নাট্যাভিনেতা দেবিন্দর দমন, চলচ্চিত্র শিল্পী যশবন্ত দমন, যশবন্ত খটকর, আমন ভোগল, ডা. হরভজন সিং, পরমিন্দর সিং মদালি, সত্যপ্রকাশ, রণজিৎ গমনু, বিবা কুলবন্ত, রোশন সিং, রমেশ কুমার, কপন বীর সিং, বিবেক-সহ অনেক নাটক ও চলচ্চিত্রের অভিনেতা অংশ নিয়েছেন।
২৯ অক্টোবর, ২০২৩ রবিবার
পাঞ্জাবে ঢাই আখর প্রেম সরবভারতীয় সাংস্কৃতিক পদযাত্রার তৃতীয় দিন ছত্তিশগড়ের সাথী নিসার আলী আদম গোণ্ডবির গজল শুনিয়ে পদযাত্রার শুরু করেন।
শ’ মে সত্তর আদমি ফিলহাল যব নাশাদ হ্যায়,
দিল রাখকর হাত কহিয়ে, দেশ ক্যায়া আজাদ হ্যায়?
কোঠিয়া সে মুল্ক কে মে আর কো মত আঁকিয়ে,
আসলি হিন্দুস্থান তো ফুটপাথ পর আবাদ হ্যায়।
ফাগোয়ারা থেকে পদযাত্রা পলাহি পৌঁছাল। দূর থেকেই মন কেড়ে নিল ক্ষেতজুড়ে পাকা ধানের সমারোহ। পাম্প করে তোলা জল মাটির নালা বাহিত হয়ে ক্ষেতে সেচ দিচ্ছে। স্থানীয় মানুষ যাত্রীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে চলেছেন। পলাহিতে আদম গোণ্ডবির উপরোক্ত গজল ছাড়াও ‘দমাদম মস্ত কলন্দর’ নাটক দেখানো হয়। সংক্ষিপ্ত আকারে ঢাই আখর পদযাত্রার উদ্দেশ্য স্থানীয় লোকেদের বলেন নিসার আলী।
তিনি বলেন, “এই যাত্রা শান্তি, প্রেম, সদ্ভাবের বার্তা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে। প্রেম আর সদ্ভাব শুরু হয় ঘর থেকে। সেখান থেকে তা আশেপাশের এলাকা হয়ে জেলাস্তরে পৌঁছায়। মানুষ তার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন আর এভাবেই একটি দেশ গড়ে ওঠে। এই যাত্রা কবীর, নানকের বার্তাবাহী, এই যাত্রা গান্ধীজির ঐতিহ্যবাহী।”
জাঠার পরবর্তী গন্তব্য ছিল রাণিপুর। জাঠা যখন এগিয়ে চলেছে, স্থানীয় লোকেরা বললেন, রাণিপুরে পাঁচটি গুরুদোয়ারা আছে আর সেখানকার প্রায় সব দোকানদার টোস্ট বিস্কুট (রাস্ক) বানান। এখানকার রাস্ক বিখ্যাত। এসব কথা জানতে জানতেই রাণিপুর চক এসে গেল। সেখানে গাছের ছায়ায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথোপকথনের আগে ইপ্টার সর্বভারতীয় সভাপতি শ্রমদান শুরু করেন। এসব দেখে স্থানীয় লোকেরাও জাঠার অংশ হিসেবে শ্রমদান করেন।
শ্রমদানের পর রাণিপুরে গাছের ছায়ায় কবিতা পাঠ করেন নিসার আলী। বিনীত তেওয়ারি ফ্যায়জের ‘ইয়ে খাকনশিনোঁ, উঠ ব্যায়ঠো ও বক্ত করিব আ পঁহুচা হ্যায়’ আবৃত্তি করেন। এখানে আদম গোণ্ডবির গজল আর কবীরের দোঁহাও শোনানো হয়, যা সবাই মিলে গুনগুন করে পুনরাবৃত্তি করছিলেন।
প্রায় দুটো বাজে। কাছেই ছিল গুরু হরগোবিন্দের রামসর গুরুদোয়ারা। স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস, এখানে ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ সিং ছাড়াও অষ্ঠম ও নবম গুরু এসেছিলেন। স্থানীয় যাত্রীদের সঙ্গেই জাঠা গুরুদোয়ারায় যায় এবং সেখানে শ্রদ্ধা ও উতসাহের সঙ্গে লঙ্গরে গুরুর প্রসাদ খান।
জাঠার সাথীরা এর পর খটকড়কলাঁ পৌঁছান। শহিদ ভগত সিং নগর জেলায় খটকড়কলাঁ ভগত সিংদের পৈতৃক গ্রাম। এখানে যাত্রীরা ভগত সিংদের বাড়ি ও তাদের সহজ সরল জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হন। ভগত সিং এর বাড়ির সামনেই আছে তাদের পারিবারিক কুয়োঁ, যেখানে যে কোনও জাতির লোক জল নিতে পারেন।
পৈতৃক গ্রাম দেখতে স্থানীয় কলেজের কিছু ছাত্রছাত্রী এসেছিল। নিসার আলী তাঁর নাচা গম্মত শৈলীতে সংক্ষিপ্ত বার্তালাপ করেন। সেই সুবাদে ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধে ‘ঢাই আখর প্রেম’ নাটক অভিনয় করেন। এরপর কলেজ শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা হয়। এইভাবে জনসংযোগ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাঞ্জাবে তৃতীয় দিনের কর্মসূচি সমাপ্ত হয়। এখানে জাঠার সাথীরা সাধারণ মানুষের থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। রাতে জলন্ধরের দেশ ভগত ইয়াদগার মেমোরিয়াল হলের নাট্যকর্মী ও সাহিত্যিকদের সঙ্গে নাট্য বিষয়ক আলোচনা হয়।.
জাঠায় ইপ্টার সর্বভারতীয় সভাপতি প্রসন্ন, প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুখদেব সিং সিরসা, জাতীয় সম্পাদক বিনীত তেওয়ারি, ইপ্টা পাঞ্জাবের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিত রূপোবালি, পাঞ্জাব প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের সভাপতি সুরজিত জজ, দীপক নাহার, ছত্তিশগড়ের নিসার আলী, গঙ্গারাম বাঘেল, জগনু রাম এবং সহযাত্রী হয়ে নাট্য ব্যক্তিত্ব দেবিন্দর দমন, চলচ্চিত্র অভিনেতা যশবন্ত দমন, আমন ভোগল, যশবন্ত খটকর, ডা. হরভজন সিং, পরমিন্দর সিং মদালি, সত্যপ্রকাশ, রণজিৎ গমনু, বিবা কুলবন্ত, রোশন সিং, রমেশ কুমার, কপন বীর সিং, বিবেক, সরবজিৎ রূপোবালি, অন্নু রূপোবালি, আঁচল নাহার, বৈষ্ণবী নাহার, রেণুকা আজাদ, বৈষ্ণবী রূপোবালি, কলবিন্দর কাউর, চাহনপ্রীত কাউর প্রমুখ অংশ নেন।
৩০ অক্টোবর ২০২৩ সোমবার
পাঞ্জাবের ঢাই আখর প্রেম সাংস্কৃতিক পদযাত্রার জাঠার চতুর্থ দিন কাপুরথালা জেলার সুলতানপুর লোধি শহরে পৌঁছায়। এটা সেই জায়গা যেখানে গুরু নানক দেব চোদ্দ বছর নবাব দৌলত খান লোধির কাছে চাকরি করেছেন। এখানে তিনি চোদ্দ বছর ছিলেন এবং তার দুই সন্তানের জন্মও এখানেই। এখানকার মসজিদও খুব প্রাচীন। অনেক বড় বড় গুরুদোয়ারাও আছে। বলা হয়, এখানেই ‘গুরুর জ্ঞান লাভ’ হয়েছিল। এখানেই তিনি ‘গুরু গ্রন্থসাহিব’ এর সূত্রপাত করেছিলেন। এখান থেকে বেশ কয়েক জায়গায় তিনি ভ্রমণ করেছেন। এই জায়গার এটা খুব বড় ঐতিহাসিক গুরুত্ব।
পাঞ্জাব রাজ্য ঢাই আখর প্রেম সাংস্কৃতিক যাত্রার পক্ষ থেকে সুলতানপুর লোধির প্রেস ক্লাবে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উকিল, সাংবাদিক আর অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি অংশ নেন। সেখানে প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের (প্রলেস) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুখদেব সিং সিরসা, পাঞ্জাবের প্রলেস সাধারণ সম্পাদক সুরজিত জজ, সর্বভারতীয় প্রলেস সম্পাদক বিনীত তেওয়ারি, ছত্তিশগড় ইপ্টার সাথী নিসার আলী, পাঞ্জাব ইপ্টার সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিত রূপোবালি, দীপক নাহার অংশ নেন।
সেমিনারের শুরুতে নিসার আলী ও সাথীরা জীবন যদু রাহীর লেখা গণসঙ্গীত ‘যব তক রোটিকে প্রশ্ন পর রাখা রহেগা ভারি পত্থর’ এবং ‘দমাদম মস্ত কলন্দর’ গেয়ে শোনান। সেমিনারে সুখদেব সিং সিরসা, সুরজিত জজ আর বিনীত তেওয়ারি ঢাই আখর প্রেম সাংস্কৃতিক জাঠার উদ্দেশ্য বিষয়ে বলেন। বক্তারা প্যালেস্টাইনের উপর ইজরায়েলের হামলা, চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, মণিপুরের হিংসাশ্রয়ী ঘটনাবলি-সহ বিশ্বের যেখানে যেখানে এই ধরণের ঘৃণা ও বিদ্বেষের ঘটনা ঘটছে, তার প্রতিবাদে একজোট হওয়ায় উচিত বলে জানান। উপস্থিত লোকেরা এই বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
এর পর সেমিনারে আসা শ্রোতাদের নিয়েই পদযাত্রা শহিদ উধম সিং চকে পৌঁছে শহিদের মূর্তিতে মাল্যার্পন করে। সেখানে ছত্তিশগড়ের নিসার আলী ও তার সাথী দেবনারায়ণ সাহু, জগনু রাম ও গঙ্গারাম বাহেল নাচা-গম্মত শৈলীতে ঢাই আখর প্রেম নাটক অভিনয় করেন। দর্শকরা মুক্তহস্তে আর্থিক সহায়তা দেন।
শহরে পদযাত্রায় শ্লোগান ওঠে ইনসানিয়াত জিন্দাবাদ, প্যায়ার মুহব্বত জিন্দাবাদ, আপসি সদ্ভাব জিন্দাবাদ, বহনাপা আউর ভাইচারা জিন্দাবাদ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন মুখতিয়ার সিং চন্দি। এই অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট রাজিন্দর সিং রাণা, প্রখ্যাত সাংবাদিক নরিন্দর সোনিয়া, লেখক স্বর্ণ সিং, ইপ্টা কাপুরথালার সভাপতি ডা. হরভজন সিং, সহ সভাপতি কাশ্মীর বজরোর, লেখিকা মজিন্দর কমল, কমরেড মকন্দ সিং, রিষপাল সিং, তরমিন্দর সিং, সরবন সিং নম্বরদার, অজিত সিং ওজলা, অমরজিত সিং টিব্বা প্রমুখ অংশ নেন।
৩১ অক্টোবর, ২০২৩ মঙ্গলবার
কাপুরথালা আরসিএফ কলোনিতে ঢাই আখর প্রেম সাংস্কৃতিক পদযাত্রার পঞ্চম দিনের কর্মসূচি ছিল সন্ধ্যা ছ’ টায়। চণ্ডীগড় ইপ্টার সভাপতি বলকার সিং যাত্রার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। এর পর গণসঙ্গীতের সঙ্গে পদযাত্রা শুরু হয়। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ কাপুরথালার দীপ সিং নগর পঞ্চায়েতে পোঁছায়।
এখানে পাঞ্জাবের লোকসংস্কৃতি ও ইতিহাসের উপর মনোগ্রাহী অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। অনুষ্ঠানের শুরু হয় পাঞ্জাবের লোকনৃত্যের মাধ্যমে। লুডি ভাঙড়ার অসাধারণ অনুষ্ঠান হয় চণ্ডীগড় ইপ্টার বলকার সিং সিদ্ধুর নেতৃত্বে। তাকে সহায়তা দেন কে এন এস শেখোঁ। দারুণ অভিনয় করেন রঞ্জিত গমনু, দীপক নাহার, বিবা কুলবন্ত, ববিত, অবতার, কলবিন্দর কাউর। পরের অনুষ্ঠান ছিল আজাদ কলামঞ্চের ‘আসল খুমারী নাম দি’ নাটক। দীপক নাহার, বিবা কুলবন্ত, রঞ্জিত বনসাল, ববিত, অবতার, কুলবিন্দর কাউর এবং অগম দীপ এতে অভিনয় করেন।
এখানে নাটকে একটি নতুন প্রয়োগ করা হয়। ছত্তিশগড়ের নাচা-গম্মত লোকশৈলীর নাটক ‘ঢাই আখর প্রেম’-এ পাঞ্জাবের অভিনেতারাও অংশ নেন। এর পর পদযাত্রীদের পাগড়ি ও স্মৃতি স্মারক দিয়ে সম্মান জানানো হয়।
এই কর্মসূচির সঞ্চালনা করেন ইন্দ্রজিত রূপোবালি। প্রবীণ অভিনেতা তালিব মোহম্মদ বক্তব্য বলেন। জেলার ভাষা আধিকারিক জসপ্রীত কাউর, সরদার সজ্জন সিং, ইপ্টা কাপুরথালার সভাপতি ডা. হরভজন সিং, কাশ্মীর বজরোর, সানি মসিহা, গ্রাম প্রধান রূপিন্দর কাউর, সরবজিত রূপোবালি, আঁচল নাহার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১ নভেম্বর, ২০২৩ বুধবার
ঢাই আখর প্রেম সর্বভারতীয় সাংস্কৃতিক পদযাত্রার শেষ দিন ৩০ অক্টোবর থেকে পয়লা নভেম্বর পর্যন্ত জলন্ধরে আয়োজিত ‘মেলা গদরি বাবেয়াঁ দা’-র স্থান দেশ ভগত ইয়াদগার হল-এ পৌঁছায়। উল্লেখ্য, গদরি মেলা স্বাধীনতা আন্দোলনে গদর পার্টির বিপ্লবীদের স্মরণে আয়োজন করা হয়। গদর পার্টির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯১৩ সালে, আমেরিকায়। এর সভাপতি ছিলেন সোহন সিং ভাখনা। এই বছর তার ১৫০ তম জন্মবর্ষ উপলক্ষ্যে তার নামে নামাঙ্কিত।
গদর পার্টি ছিল দেশপ্রেমী ধর্মনিরপেক্ষ একটি দল, যার সদস্য ছিলেন তারকনাথ দাস, বিষ্ণু গণেশ পিংলে, মৌলবী বরকতুল্লা প্রমুখ। এই বিপ্লবীদের স্মরণে প্রতি বছর এই মেলার আয়োজন করা হয়। এখানে পাঞ্জাবের সুপুত্র ভগত সিং, উধম সিং, কর্তার সিং সরাবাকেও স্মরণ করা হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদেশে থাকা ভারতীয়দের দ্বারা শুরু করা এই গদর আন্দোলনকে সারা দিন সারা রাত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এটি সম্পূর্ণ ভাবে শ্রমজীবীদের মেলা। এই মেলার বিরাট বড় অংশ হল বইয়ের প্রদর্শনী ও বিপণি। বিপুল সংখ্যায় বইয়ের স্টল থাকে এবং হাজার হাজার বই বিক্রি হয়।
গদরি বাবাদের এই বিখ্যাত তিনদিনের মেলা উপলক্ষ্যে পয়লা নভেম্বর মঞ্চে ঢাই আখর প্রেম জাঠায় অংশ নেওয়া ছত্তিশগড়ের লোক শিল্পীরা নাচা-গম্মত শৈলীতে বিখ্যাত গান ‘দমাদম মস্ত কলন্দর’ গেয়ে শোনান।
এই গোষ্ঠীর প্রধান নিসার আলী আদম গোণ্ডবির গজল গেয়ে শোনান। এই অনুষ্ঠানে প্রগতিশীল লেখক সঙ্ঘের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুখদেব সিং সিরসা, জাতীয় সম্পাদক বিনীত তেওয়ারি, পাঞ্জাব শাখার সভাপতি সুরজিত জজ, পাঞ্জাব ইপ্টার সভাপতি সঞ্জীবন সিং, রাজ্য ইপ্টার সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিত রূপোবালি, চণ্ডীগড় ইপ্টার সভাপতি বলকার সিং সিদ্ধু, সাধারণ সম্পাদক কে এন এস শিখোঁ, দীপক নাহার, সরবজিত রূপোবালি, বিবা কলবন্ত, রঞ্জিত গমনু, কুলবিন্দর কাউর, এআইএসএফের এক সাথী ও অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা পদযাত্রা ও পথনাটকের সময় সঙ্গে থেকেছেন।
Report: Santosh (IPTA Delhi) and Nisar Ali (IPTA Chhattisgarh)
Translation by: Chandrasekhar Bhattacharjee (in Bangla)
Watch: Video “Jatha in Punjab | पंजाब में जत्था”